বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আকুর রেকর্ড দেনা শোধ, চাপে রিজার্ভ

  •    
  • ৬ মার্চ, ২০২২ ২৩:০৭

বর্তমানের আমদানির খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। অথচ ছয় মাস আগেও ১০ মাসের আমদানি খরচ মেটানোর রিজার্ভ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকে।

বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন (৪ হাজার ৪০০ কোটি) ডলারে নেমে এসেছে।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন (২১৬ কোটি) ডলারের রেকর্ড আমদানি বিল পরিশোধের পর রোববার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৪৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে; যা গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

বর্তমানের আমদানির খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। অথচ ছয় মাস আগেও ১০ মাসের আমদানি খরচ মেটানোর রিজার্ভ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, মহামারি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর থেকেই দেশে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগে মাসে আমদানি খাতে গড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হতো। করোনার মধ্যে তা কমে গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানিতে উল্লম্ফন লক্ষ করা যায়। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়। আগস্টে তা বেড়ে ৬ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। সেপ্টেম্বরে তা গিয়ে ঠেকে ৭ বিলিয়ন ডলারে।

অক্টোবরে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয় ৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। নভেম্বরে তা বেড়ে ৭.৮৫ বিলিয়ন ডলারে উঠে। ডিসেম্বরে তা আরও বেড়ে ৮ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে।

সবশেষ জানুয়ারি মাসে ৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা।

অর্থনীতির বিশ্লেষক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত আমদানি বাড়ার কারণেই রিজার্ভ কমছে। এ ছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের নিম্নগতি রিজার্ভ কমার আরও একটি কারণ বলে জানিয়েছেন তারা।

বেশ কয়েক বছর ধরে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। একের পর এক রেকর্ড হয়। মহামারি করোনাকালে আমদানিতে ধীরগতি আর রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ঊর্ধ্বগতির কারণে গত ২৪ আগস্ট রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সময়ের চেয়ে বেশি।

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আকুর জুলাই-আগস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

আমদানি বাড়ায় রিজার্ভ থেকে প্রয়োজনীয় ডলার চলে যাওয়ায় অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে তা ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। রপ্তানি বাড়ায় নভেম্বরের প্রথম দিকে রিজার্ভ খানিকটা বেড়ে ৪৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।

৭ নভেম্বর আকুর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আকুর নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের বিল শোধের পর এই সূচক ফের ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

রপ্তানি আয় বাড়ায় এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহে গতি ফেরায় গত দুই মাসে তা বেড়ে ৪৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে আকুর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়। রোববার সমন্বয় করার পর তা ৪৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

এক বছর পর রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নামল। গত বছরের মার্চে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার।

আকুর রেকর্ড দেনা পরিশোধ

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আকুর ২ বিলিয়নন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে কখনই আকুর এতো বিশাল অঙ্কের বিল শোধ করা হয়নি।

গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদে ১৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।

গত অক্টোবর ও নভেম্বরে পণ্য আমদানি খরচের হিসাবে বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘আমদানি বাড়লে রিজার্ভ কমবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এখনও মোটামুটি সন্তোষজনক রিজার্ভ আছে। আর আমদানি বাড়া তো ভালো। এতে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন বেশি দিন থাকবে না। সেটাই হচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে, অনন্তকাল ধরে প্রবাসীরা বেশি অর্থ দেশে পাঠাবেন, এটার কোনো কারণ নেই।

‘আর আরেকটি কথা আমি বলতে চাই, প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স বাড়ানো যায় না। সত্যিকার অর্থে রেমিট্যান্স বাড়াতে আরও বেশি বেশি লোক বিদেশে পাঠাতে হবে; দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে হবে। করোনার কারণে যারা দেশে ফিরে এসেছিলেন, তাদের দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’

‘তবে ভালো খবর হচ্ছে, রপ্তানি আয় বাড়ছে। এটা আগামী কিছু দিন অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার ধাক্কা সামলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামালসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিও আমদানি খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে আমদানিতে রিজার্ভ থেকে আগের চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৫০ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি (সিঅ্যান্ডএফ) করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।

রেমিট্যান্সের আট মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ১৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়নন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম।

তবে রপ্তানি বাণিজ্যে উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। এই আট মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি।

এ বিভাগের আরো খবর