বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রমরমা ওষুধ রপ্তানির বাজার

  •    
  • ৬ মার্চ, ২০২২ ২১:৪৪

প্রতি বছরই ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে। ২০১৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩২ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে ছাড় (মেধাস্বত্ব অধিকার-ট্রিপস) দেয়ার পর থেকে এ খাতের রপ্তানির পালে বাড়তি হাওয়া লাগে। এরপর করোনা চিকিৎসার ওষুধ রপ্তানি করে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে ওষুধ খাত।

২০১০-১১ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি করে মাত্র ৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ১০ বছরের ব্যবধানে ২০২০-২১ অর্থবছরে সেই আয় চার গুণ বেড়ে ১৭ কোটি ডলারে ওঠে।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরেও সেই উল্লম্ফনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) জীবন রক্ষাকারী ওষুধপণ্য রপ্তানি থেকে ১৩ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে। বর্তমান বিনিময়হার (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা।

এই আট মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এ খাত থেকে ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি অর্থ এসেছে। নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে৮ দশমিক ৬২ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, প্রতি বছরই ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে। তবে ২০১৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩২ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে ছাড় (মেধাস্বত্ব অধিকার-ট্রিপস) দেয়ার পর থেকে এ খাতের রপ্তানির পালে বাড়তি হাওয়া লাগে। এরপর করোনা চিকিৎসার ওষুধ রপ্তানি করে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে ওষুধ খাত।

করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের বিভিন্ন শিল্প খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও ওষুধশিল্পে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো করোনা এ খাতে আশীর্বাদই বয়ে এনেছে বলা যায়। অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি রপ্তানি আয় বেড়েছে সমানতালে। রপ্তানি পণ্যের তালিকায় কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের অন্তর্ভুক্তি, গুণগত মানের উন্নয়ন ও সরকারের নীতিসহায়তার কারণে সুবাতাস বইছে এ খাতে।

ওষুধশিল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, গত অর্থবছরে কেবল কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ রপ্তানি থেকেই আয় হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এই আয় ২৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশ মূলত ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, ক্যানসার, কুষ্ঠরোগ, অ্যান্টি-হেপাটিক, পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, কিডনি ডায়ালাইসিস, হোমিওপ্যাথিক, বায়োকেমিক্যাল, আয়ুর্বেদিক ও হাইড্রোসিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওষুধ রপ্তানি করে থাকে।

গত অর্থবছরে এ তালিকায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ওষুধ যুক্ত হয়, ফলে এ শিল্পে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ আরও বেড়েছে।

বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের গ্লোবাল বিজনেসের পরিচালক মনজুরুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প অল্প সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাস নিরোধক ওষুধের জেনেরিক সংস্করণ উৎপাদন করে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভির রপ্তানি বাড়াতে অবদান রাখছে।’

সরকারের নীতিসহায়তার প্রশংসা করে মনজুরুল বলেন, ‘বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চপর্যায়ের নিয়ন্ত্রিত বাজারে তিন মাসের মধ্যে প্রবেশ করতে পেরেছে, যেখানে প্রবেশ করতে স্বাভাবিক অবস্থায় অন্তত দুই বছর সময় লাগত।’

ওষুধশিল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভিরের জেনেরিক সংস্করণটি আমদানি করছে।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট চাহিদার ৯৭ শতাংশের বেশি ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ৪৩টি কোম্পানির বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় ১৫৩টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

১০ বছরের রপ্তানির চিত্র

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরেও ওষুধ রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই অর্থবছরে এ খাত থেকে ১৮ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরা আছে। আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ের লক্ষ্য ছিল ১২ কোটি ২ লাখ ১০ হাজার ডলার; আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এ হিসাবেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২০ হাজার ডলার বা ১ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা।

আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ১ হাজার ১০২ কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসেছিল ৮৭৭ কোটি টাকা।

২০১০-১১ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩৭৫ কোটি টাকা আয় করেছিল। ২০১১-১২ অর্থবছরে আয় হয় ৪০৯ কোটি টাকা।

২০১২-১৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৮ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আয়ের পরিমাণ ছিল ৫৫৪ কোটি টাকা। এরপর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা কিছুটা কমে হয় ৫৪১ কোটি টাকা।

এরপর আবার রপ্তানি বাড়তে থাকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই আয়ের অঙ্ক ছিল ৬৫৭ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে হয় ৭১৪ কোটি টাকা।

ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ওষুধ রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশই দখল করে আছে বেক্সিমকো। দ্বিতীয় অবস্থানে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস। এ ছাড়া স্কয়ার, এসকেএফ, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, একমি ল্যাবরেটরিজসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ওষুধ রপ্তানি করে থাকে।

উত্তরণ-পরবর্তী রপ্তানিতে কী প্রভাব পড়বে?

ওষুধ খাতে রপ্তানি আয় বেড়ে চললেও ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হলে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে ছাড় পাওয়ার সুবিধা আর থাকার কথা নয়। বর্তমান ট্রিপস সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বের জন্য কোনো ব্যয় না করেই ওষুধ তৈরি ও কেনাবেচা করার সুযোগ পাওয়ার কথা রয়েছে।

এলডিসি থেকে বের হলেও বাংলাদেশ যাতে এই সুবিধা পায়, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি, এই সুবিধাটা আমরা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পাব। ডব্লিউটিও ইতিবাচক সাড়া দেবে।’

একই আশা করছেন দেশের অন্যতম বড় ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের গ্লোবাল বিজনেসের পরিচালক মনজুরুল আলম।

রাব্বুর রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদেরও বিশ্বাস একটা ভালো সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে ডব্লিউটিও। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশের ওষুধশিল্প ও রপ্তানিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।’

তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে যেভাবে রপ্তানি বাড়ছিল, সেভাবেই বাড়বে। মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং দেশ-বিদেশের বাজারে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই শিল্পের রপ্তানি আরও বাড়বে।’

মনজুরুল আলম বলেন, ‘ওষুধ খাতের রপ্তানি বাজার খুবই উজ্জ্বল বলে আমি মনে করি। গত অর্থবছরে আমাদের কোভিডের ওষুধের প্রচুর অর্ডার ছিল, কিন্তু আমরা দিতে পারিনি। দেশের চাহিদা মিটিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘ট্রিপস নিয়ে আমরা মোটেই চিন্তিত নই। সরকার যেভাবে সিরিয়াসলি কাজ করছে, বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি নিয়ে যতটা আন্তরিক, তাতে আমরা বুঝতে পেরেছি ২০৩৩ সাল অবধি আমরা এ সুবিধা পেয়ে যাব।

‘আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের এই খাত এখন এমন শক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি আমাদের এখানে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে। সে কারণে ট্রিপস সুবিধা উঠে গেলেও বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের কোনো সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি না।’

এ বিভাগের আরো খবর