বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মিল ছেড়ে বাজারে কেন, ভোক্তা অধিকারকে ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন

  •    
  • ৬ মার্চ, ২০২২ ১৮:৪৯

গালাগাল হজম করে দোকানে ঢুকতেই এক বিক্রেতা বলেন, ‘মিলে মাল ডেলিভারি দিচ্ছে না। মিলরে বলেন আগে ডেলিভারি ফ্রি করতে। বাংলাদেশে কয়টা মিল আছে? সব মিলেই এই সংকট।… আমরা টাকা দিয়েও ১৫/২০ দিনে মাল পাচ্ছি না, এর দায়ভার কে নেবে?’

খোলা সয়াবিনের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য যা বেঁধে দেয়া আছে, বাজারে দাম তার চেয়ে বেশি হওয়ার কারণ জানা গেল পাইকারি বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে।

যে দামে ভোক্তাদের কাছে তেল বিক্রি করার কথা, সেই দামে তেল বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারেই। এরপর পরিবহন খরচ আর মুনাফার পর তা বিক্রি হবে ভোক্তাদের কাছে।

এই অভিযানে আবার পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ। তারা চিৎকার করে সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের গালাগাল করছিলেন। বলছিলেন, অভিযান কেন কারখানায় না গিয়ে এখানে করা হচ্ছে?

রোববার রাজধানীর মৌলভীবাজারে সয়াবিন তেলের পাইকারি মোকামে অভিযানে যায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দুপুরে শুরু হওয়া এই অভিযানে জরিমানা করা হয় চারটি দোকানে।

গালাগাল হজম করে দোকানে ঢুকতেই মো. জামাল নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘মিলে মাল ডেলিভারি দিচ্ছে না। মিলরে বলেন আগে ডেলিভারি ফ্রি করতে। বাংলাদেশে কয়টা মিল আছে? সব মিলেই এই সংকট।… আমরা টাকা দিয়েও ১৫/২০ দিনে মাল পাচ্ছি না, এর দায়ভার কে নেবে?’

তিনি অভিযোগ করেন, মিলেও দামে পার্থক্য আছে। বলেন, ‘ঢাকা-চিটাগংয়ে ২০০ টাকা ৩০০ টাকা কেন দামে ডিফারেন্স হবে?’

একজোট হয়ে থাকা ব্যবসায়ীদের হইহুল্লোড় ঠেলেই বিভিন্ন দোকানে ঢোকেন কর্মকর্তারা।

জব্বার স্টোরে গিয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পামঅয়েল বিক্রির প্রমাণ পেয়ে দোকানটিকে জরিমানা করা হয় ৫০ হাজার টাকা।

তখন দোকানমালিক তার ভাউচার দেখান। তিনি ১৪৪ টাকা লিটার দরে কারখানা থেকে তেল কিনে কেবল ৫০ পয়সা মুনাফায় বিক্রি করেছেন।তাহলে আমার দোষ কোথায়? বিক্রেতার এই মন্তব্যে অভিযানে থাকা এক কর্মকর্তা তাকে বলেন, ‘আপনি যে দামেই কেনেন না কেন, ১৩৩ টাকা দরে বিক্রি করতে হবে।’

তখন সেই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এইভাবে চললে তো তেল বেচা বন্ধ করে দেয়া লাগবে।’

এরপর ঢাকা ট্রেডার্স ও মুসলিম স্টোরকেও সমপরিমাণ জরিমানা করা হয়। মুসলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে ছোট একটি দোকানকে জরিমানা করা হয় ১০ হাজার টাকা।

তিনটি দোকানেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাদেরকে সাজা দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন রাখেন কেন মিলে অভিযান চালানো হচ্ছে না।

একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, মিল থেকে তাদেরকে যে বেশি দামে তেল কিনতে হচ্ছে, তার যেন কোনো প্রমাণ না থাকে, সে জন্য কোনো রসিদও দেয়া হয় না।

তখন অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহারিয়ার ব্যবসায়ীদের ফোনের কথোপকথন রেকর্ড অথবা তাদের সামনে কথা বলে তেলের অর্ডার নেয়ার পরামর্শ দেন।

অভিযান শেষে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহারিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটা চিত্র পেয়েছি এমন যে, মৌলভীবাজারেই ১৫৭, ১৪৩ ও ১৪৭ টাকা দরে তেল বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিনের ক্ষেত্রে সরকারি রেট সর্বোচ্চ ১৪৩ টাকা ও পামঅয়েল ১৩৩ টাকা লিটার। অথচ পাইকারিতেই এই দাম।’

মিলমালিকদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, এখানে আপনাদের কোনো দুর্বলতা আছে কি না- এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুর্বলতা-সবলতার বিষয় না। সরকার যখন কাজ করে, তখন গণমানুষের জন্যই কাজ করে। যে প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন সরকারের দিকনির্দেশনা মানতে বাধ্য।

‘এসও (পাইকারি) ব্যবসায়ীরা দোষ দেন মিলের লোকেদের, মিলের লোকেরা দোষ দেন এসও ব্যবসায়ীদের। মিলে ট্রাকের সিরিয়াল পড়ে। আমরা একটা মিলে গিয়েছি অভিযানে। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। যারা কারসাজি করবেন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মঙ্গলবার ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালকের সঙ্গে মৌলভীবাজার ব্যবসায়িক সমিতির বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শবনম ভেজিটেবল অয়েল মিলে আমরা ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু অভিযান চালাতে যে তথ্য-উপাত্ত দরকার হয়, তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। আজকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে তথ্য পেয়েছি। তাদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে আমরা অভিযান পরিচালনা করব।’

তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যেকটা মিলকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের কী পরিমাণ মজুত আছে, কী পরিমাণ বিক্রি করেছে- এই তথ্য দিতে বলা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর