ভারত থেকে তিন বছর পর আর পাটবীজ আনতে হবে না জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা প্রতিবেশী দেশের তুলনায় ভালো পাটবীজ উদ্ভাবন করেছেন।
জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোববার এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
বস্ত্র ও পাটসচিব মো. আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম এবং বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একদম পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ করেছি কীভাবে পেঁয়াজ ও পাটসহ অন্যান্য ফসলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা যায়। চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই তা সম্ভব হবে। এ জন্য দেশে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। পাট ও পেঁয়াজে পার্শ্ববর্তী দেশ বা অন্যের নির্ভরতা আর থাকবে না।
‘এখন আমাদের পাটবীজ আনতে হয় ভারত থেকে, তবে আমাদের বিজ্ঞানীরা জিন টেকনোলজি ব্যবহার করে ভারতের চেয়েও উন্নত বীজ আবিষ্কার (উদ্ভাবন) করেছে। এই বীজ এরই মধ্যে কৃষক পর্যায়ে দেয়া শুরু হয়েছে। উৎপাদনশীলতা ভালো; আঁশও ভালো। তিন বছর পর ভারত থেকে বীজ আমদানি করতে হবে না।’
অনুষ্ঠান আয়োজকদের সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে চেতনা তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহারে ঝুঁকছে, কিন্তু এখানে যে ফুল ব্যবহার করা হয়েছে, তা প্লাস্টিকের। এটা কি ঠিক হয়েছে? আমরা কেন প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহার করব?
‘যশোরের গদখালী যান, শ্রীপুর যান। কত কষ্ট করে চাষিরা ফুল উৎপাদন করেন। সে ফুলের দাম পান না তারা, নানান সমস্যা। আমরা বলছি, পরিবেশকে রক্ষা করব। সেখানে পাট মন্ত্রণালয়ের এই প্লাস্টিকের ফুল ব্যবহার করা কি ঠিক হয়েছে? প্লাস্টিকের ফুল আমদানি আমরা বন্ধ করতে পারব না, তবে ট্যাক্স বাড়াতে পারব, দাম বাড়াতে পারব, ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারব। আর চাষিদের আমরা উৎসাহিত করতে পারব; দেশকে বাঁচাতে পারব।’
পাট রপ্তানি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাটসহ সব কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছেন, কিন্তু পাটের ক্ষেত্রে সেখানে তিন স্তরের প্রণোদনা রয়েছে। ফলে সব পাটপণ্য রপ্তানিকারক ২০ শতাংশ প্রণোদনা পাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সব পাটপণ্য রপ্তানিকারকের জন্য ২০ শতাংশ প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘পাট রপ্তানিতে আমরা বিপ্লব ঘটাব এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের পাট নিয়ে যে প্রতিযোগিতা, সেটা মোকাবিলা করে আমাদের সোনালি আঁশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকব।’
পাটের বৈশ্বিক চাহিদা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে পাটের চাহিদা বাড়ছে। তাই উৎপাদনশীলতা বাড়াতে না পারলে টিকে থাকা অনেক কঠিন হবে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
‘সারা পৃথিবীতে পরিবেশবান্ধব হিসেবে পাটের যে চেতনা সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে আমাদের ব্যবহার করতে হবে। পাটের সম্ভাবনা অসীম, তবে প্রযুক্তি দিয়ে সেখানে আমাদের টিকে থাকতে হবে।’
পাট দিবস উপলক্ষে পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে অবদানের জন্য ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
এবার পাট দিবসের স্লোগান ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ, পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ।’
এর আগে দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে আব্দুল গনি রোডে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি হয়। পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে র্যালির উদ্বোধন করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।