মৎস্য সম্পদ ব্যবহার করে অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘মৎস্য উৎপাদনে আমরা যথেষ্ট গবেষণা করে যাচ্ছি। অনেক সাফল্যও পেয়েছি। সমুদ্রের মৎস্য আহরণ বা সমুদ্রসম্পদ আহরণে আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে। আমরা তা করব, এটা আমরা বিশ্বাস করি।’
চট্টগ্রামে রোববার সকালে মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমির ৪১তম ব্যাচের ক্যাডেটদের মুজিববর্ষের পাসিং আউট প্যারেডে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারি বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কিছুটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলেও সেটা কোনো বাধা নয় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) সফল বাস্তবায়নের পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও দেশ এগিয়ে চলেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে থেমে থাকলে চলবে না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি নীতিমালা ঘোষণা দিয়েছে। এ সম্পদ ব্যবহার করে যেন আমাদের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে পারি, শক্তিশালী করতে পারি, মজবুত করতে পারি, তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।’
সরকারপ্রধান মনে করেন বঙ্গোপসাগর শুধু দেশের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যক্ষেত্রেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘এখানে বিশাল সম্পদ রয়েছে। সেই সম্পদ আমাদের আহরণ করতে হবে। এখানে যেমন মৎস্য সম্পদ আছে, অন্যান্য সামুদ্রিক সম্পদও আছে। সেগুলো আহরণ করে আমাদের অর্থনীতিকে আমরা আরও শক্তিশালী করতে পারব, এটাই আমি আশা করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘মাছে-ভাতে বাঙালি। কাজেই এই মাছ আমাদের একটা বিরাট সম্পদ। যে সম্পদ শুধু আমাদের পুষ্টি জোগায় না, সেই সঙ্গে সঙ্গে এ সম্পদ প্রক্রিয়াজাত করে আমরা বিদেশে রপ্তানি করেও অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারি।'
দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে ক্যাডেটদের প্রতি আহ্বান
মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমি থেকে এবার ৪১তম ব্যাচে নটিক্যাল বিভাগে ৩৩ জন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩১ জন এবং মেরিন ফিশারিজ বিভাগে ২০ জন ক্যাডেটসহ সর্বমোট ৮৪ জন নারী ও পুরুষ ক্যাডেটের পাসিং আউট হয়েছে।
তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা শিক্ষাঙ্গনের ক্ষুদ্র বলয় ছেড়ে পেশাগত জীবনের বৃহত্তর অঙ্গনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ। আমি আশা করি, সদা পরিবর্তনশীল এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ আধুনিক এ বিশ্বে টিকে থাকার জন্য ইতোমধ্যে তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান দ্বারা নিজেদের তৈরি করে নিতে পারবে।’
পরিশ্রম, সময়ানুবর্তিতা, সততা, কর্মদক্ষতা, মূল্যবোধ এবং দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমকে কর্মজীবনে উন্নতির প্রধান ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ বোধগুলো আত্মস্থ করে ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্রে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এবং দেশের উন্নতির জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করবে। যেন ভবিষ্যৎ যারা বংশধর, তারাও নিরাপদ জীবন পায়। আমাদের স্বাধীনতার যে আদর্শ, নীতি সেটা মেনে চলবে।’
আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মেরিটাইম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি একটি আন্তর্জাতিকমানের মেরিটাইম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে শুরু করে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে মহিলা ক্যাডেট ভর্তি শুরু করে। এ অ্যাকাডেমি থেকে পাস করা ক্যাডেটদের বহির্বিশ্বে মেরিটাইম সেক্টরে চাকরির সুযোগ লাভে ২০১৮ সাল থেকে নটিক্যাল ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রি-সি ট্রেনিং-সম্পন্ন ক্যাডেটদের অনুকূলে নৌপরিবহন অধিদপ্তর কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হচ্ছে।
‘ফলে এ অ্যাকাডেমির ক্যাডেটদের সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজে চাকরি লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের কর্মক্ষেত্র সমগ্র বিশ্বে বিস্তৃতি লাভ করেছে।’
মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে তার দূরদর্শিতা, অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কথা উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সালে দ্য টেরিটরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ট মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন জাতির পিতা। তার ভিত্তিতেই পরবর্তী সময়ে সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুটি প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে কিন্তু আমরা এই অর্জনটা করেছি। যে সমুদ্রসম্পদ আজকে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে কাজে লাগবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’