প্রভাবশালী পরিবার ত্বকী হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকায় বিচার পেতে দেরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে ৯ বছর ধরে আমাদের সন্তান ত্বকীর হত্যার বিচার চাইতে হচ্ছে। সঠিকভাবে বিচারটা হচ্ছে না।’
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় তার কবরে ফুল দিয়ে তাকে স্মরণ ও রুহের মাগফিরাত কামনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বন্দর উপজেলার মোল্লাবাড়ি এলাকায় সিরাজ শাহর আস্তানায় রোববার সকালে ত্বকীর কবরে ফুল দেয়ার সময় মেয়রের সঙ্গে ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারাসহ সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় মেয়র বলেন, প্রভাবশালী পরিবার এ হত্যায় জড়িত থাকায় বিচারে দেরি হচ্ছে বলে নারায়ণগঞ্জের মানুষের ধারণা। আমরা চাই আমাদের সরকার যেটি সঠিক ও ন্যায়, সেটাই করবে।
‘আমাদের ছোট বাচ্চাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমরা এর বিচার চাই। আমরা চাই না এ বিচার পেতে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোমশিখা প্রজ্বালন করতে হোক।’
আইভী বলেন, ‘দেশের আলোচিত অনেক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে, সে ধারাবাহিকতায় ত্বকী হত্যারও বিচার দ্রুত করা হোক।’
নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় জানান, ২০১৩ সালের আজকের দিনে সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে আমাদের প্রিয় সন্তান তানভীর মোহাম্মদ ত্বকীকে অপহরণ করা হয়। থানা-পুলিশসহ বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে ৮ মার্চ তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যার শাখা খালে। ত্বকীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ঘাতকরা।
তিনি বলেন, ‘সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আন্দোলন করছি, নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ত্বকী হত্যার বিচার চাইছি, কিন্তু এখনও কোনো সুরহা হয়নি। আমরা ত্বকী হত্যার দ্রুত বিচার চাই।’
ত্বকী হত্যার ৯ বছরে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ বলে জানান তিনি।
এদিকে ত্বকী হত্যার বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি ও মানববন্ধন করে আন্দোলন চালিয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহামুদ বলেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচারহীনতার ৯ বছরে আমরা। টানা ৯ বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা এই হত্যার বিচার চেয়ে আসছি। চার্জশিট আটকে রেখে বিচার বন্ধ করা যাবে না। যত দিন খুনিরা শাস্তি না পাবে, আন্দোলন চলবে।’
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের এক সভায় ত্বকী হত্যার বিচার চেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ শামীম ওসমান। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিও জানান তিনি। তার ভাতিজা আজমেরী ওসমানসহ ১১ জন ত্বকী হত্যায় জড়িত বলে জানিয়েছিল র্যাব।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে শহরের শায়েস্তা খান সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর শহরের চারারগোপ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মামলার পর গত আট বছরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন রিফাত বিন ওসমান, সুলতান শওকত ভ্রমর, ইউসুফ হোসেন লিটন, সালেহ রহমান সীমান্ত ও তায়েবউদ্দিন আহমেদ জ্যাকি। এরা সবাই আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠজন ও অনুসারী ছিলেন।
ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
হত্যার এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান জানান, আজমেরী ওসমানসহ ১১ জন ত্বকী হত্যায় অংশ নেন। একটি খসড়া অভিযোগপত্র তৈরির কথাও জানান তিনি। তারপরও আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি র্যাব। গ্রেপ্তার হননি আজমেরী ওসমান।