বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ত্বকী হত্যা: বিচার শুরুর অপেক্ষায় ৯ বছর

  •    
  • ৬ মার্চ, ২০২২ ০৮:২০

বাদীপক্ষের আইনজীবী প্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘ত্বকী হত্যা মামলায় ৯ বছরে ১৪৩ বার আদালতে নথি উঠেছে। মামলার শুনানি, হাজিরার তারিখও গেছে। বিচারক প্রতিবেদনের জন্য তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বারবার তাগিদ দিয়েছেন। তবে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি র‍্যাব। প্রতিবেদন জমার সম্ভাব্য সময়ও জানাতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাটি।’

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ৯ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন এই শিক্ষার্থী। দীর্ঘ সময়েও এই হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দিতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। ফলে মামলাটি এখনও বিচারিক আদালতে ওঠেনি।

মামলার বাদীর আইনজীবী প্রদীপ ঘোষ জানান, ত্বকী হত্যা মামলায় ৯ বছরে ১৪৩ বার আদালতে নথি উঠেছে। মামলার শুনানি, হাজিরার তারিখও গেছে। বিচারক প্রতিবেদনের জন্য তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বারবার তাগিদ দিয়েছেন। তবে তারা এখনও তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। প্রতিবেদন জমার সম্ভাব্য সময়ও জানাতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাটি।

আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, আগামী ১৭ এপ্রিল মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ। এর আগেও অনেক তারিখ গেছে। প্রতিবেদন জমা পড়েনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার মশিউর রহমান বলেন, ‘মামলার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যখন অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে তখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্রিফিং করবে।’ তবে সেই দিনটি কবে আসবে তা তিনি জানাতে পারেননি।

র‌্যাব-১১ মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তাদের সাতজন অধিনায়ক রদবদল হয়েছেন। এর আগে প্রতি বছরের এই সময়ে এসে ত্বকী হত্যার বিষয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্রুতই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। তবে তা হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ মামলার বাদীসহ মানবাধিকারকর্মীরা।

মামলার বাদী ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, ‘ত্বকী হত্যা মামলায় আট বছরেও অভিযোগপত্র দেয়নি র‌্যাব। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ না দিলে এ হত্যার বিচার হবে না। ত্বকীর ঘাতকরা সরকারি দলের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং এই বিচার হতে হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের প্রয়োজন।’

বাবা রফিউর রাব্বির সঙ্গে ত্বকী। ছবি: সংগৃহীত

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ বলেন, ‘ত্বকীকে কারা কীভাবে হত্যা করেছে- এটা র‌্যাবের খসড়া প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশবাসী জানে। তবুও কেন আদালতে চার্জশিট জমা পড়ছে না? আদালতে তারিখের পর তারিখ যাচ্ছে। যত দিন পর্যন্ত ত্বকী হত্যার বিচার না হবে তত দিন পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

মানবাধিকার কমিশন নারায়ণগঞ্জের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানাল যে ওসমান পরিবার ত্বকী হত্যায় জড়িত। অথচ ৯ বছরেও চার্জশিট জমা দিচ্ছে না তারা। আমরা অবিলম্বে চার্জশিট জমা ও বিচারকাজ শুরুর দাবি জানাচ্ছি।’

ত্বকী হত্যার বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি ও মানববন্ধন করে আন্দোলন চালিয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহামুদ বলেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচারহীনতার ৯ বছরে আমরা। টানা ৯ বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা এই হত্যার বিচার চেয়ে আসছি। চার্জশিট আটকে রেখে বিচার বন্ধ করা যাবে না। যত দিন খুনিরা শাস্তি না পাবে, আন্দোলন চলবে।’

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের এক সভায় ত্বকী হত্যার বিচার চেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ শামীম ওসমান। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিও জানান তিনি। তার ভাতিজা আজমেরী ওসমানসহ ১১ জন ত্বকী হত্যায় জড়িত বলে জানিয়েছিল র‌্যাব।

আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান। ছবি: নিউজবাংলা

২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে শহরের শায়েস্তা খান সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর শহরের চারারগোপ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে তার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় মামলার পর গত আট বছরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন রিফাত বিন ওসমান, সুলতান শওকত ভ্রমর, ইউসুফ হোসেন লিটন, সালেহ রহমান সীমান্ত ও তায়েবউদ্দিন আহমেদ জ্যাকি। এরা সবাই আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠজন ও অনুসারী ছিলেন।

ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।

হত্যার এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে মামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান জানান, আজমেরী ওসমানসহ ১১ জন ত্বকী হত্যায় অংশ নেন। একটি খসড়া অভিযোগপত্র তৈরির কথাও জানান তিনি। তারপরও আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি র‍্যাব। গ্রেপ্তার হননি আজমেরী ওসমান।

এ বিভাগের আরো খবর