রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এক বাসায় শিশু গৃহকর্মীকে টানা তিনদিন বাথরুমে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। শিশুটির চিৎকার শুনে পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে শনিবার শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রী তানজিম হাসান ও গৃহকর্তা এজাজ সাকলাইনকে আটক করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১২ বছর বয়সের ওই গৃহকর্মীর নাম লিজা আক্তার প্রিয়া। শিশুটির সারা শরীরে অসংখ্য ক্ষত চিহ্ন। প্রায় পুরো শরীর আগুনে ঝলসে দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মুখ ছাড়া পুরো শরীর ঢাকা পড়েছে ব্যান্ডেজে।
চিকিৎসাধীন শিশুটি জানায়, তার দূর সম্পর্কের এক খালা দুই মাস আগে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকে এক ভবনে চতুর্থ তলায় এক ফ্ল্যাটে কাজের মেয়ে হিসেবে দিয়ে যান। মাসিক বেতন তিন হাজার টাকা। কাজের চাপ বেশি থাকায় অনেক সময়ই শিশুটি সব কাজ সঠিক সময়ে ঠিকমতো করতে পারত না। আর এজন্য তাকে প্রতিনিয়ত মারধর করা হতো।
পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা শনিবার দুপুরের দিকে বাথরুম থেকে ‘আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও’ চিৎকার শুনতে পান। তারা জানালা দিয়ে জানতে চান যে শিশুটি চিৎকার করছে কেন। পরে ঘটনা শুনে তারা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে শিশুটি উদ্ধার করে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটি বলে, ‘তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে আমার গায়ে গরম পানি ঢালত এবং খুন্তি চুলায় গরম করে আমার সারা গায়ে ছেকা দিত।’
প্রিয়া ময়মনসিংহ জেলার রহমতপুর গ্রামের রতন মিয়ার মেয়ে। শিশুটির বাবা তার মা সেলিনা বেগমকে ছেড়ে চলে যান। কিছুদিন পর মা-ও তাকে ফেলে চলে যান। সে বড় হয়েছে নানী হালিমা বেগমের কাছে। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে তৃতীয়।
ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ট্রিপল নাইনে ফোন পেয়ে শনিবার বিকেলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ৪ নম্বর রোডে ১৯৩ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটের সামনে যাই। মেইন গেট খুলে পরে বাথরুমের দরজা ভেঙে শিশুটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট নিয়ে যাই। এ ঘটনায় গৃহকর্ত্রী তানজিম হাসান ও গৃহকর্তা এজাজ সাকলাইনকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।’