জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন হল থেকে পড়ে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার করেছিল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিন লাখ টাকা দিয়ে আট লাখ টাকা দেয়া হয়েছে বলে একটি দলিলে সই নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
গত বছরের ২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল সংলগ্ন নির্মাণাধীন ২২ নম্বর হলের ছয়তলা থেকে পড়ে শাহের আলী নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ সময় নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
দাবির মুখে নিহতের পরিবারের একজনকে স্থায়ী চাকরি ও আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নূরানী কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।
এ অবস্থায় গত বছরের জুনে ঢাকার মোহাম্মদপুরে কোম্পানির অফিসে ডেকে তিন লাখ টাকা দিয়ে একটি দলিলে সই নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহতের বাবা শমসের আলী। এ ছাড়া আট লাখ টাকা দেয়ার বিষয়টি জানতেন না বলেও জানান তিনি।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই কোম্পানি কোনো টাকাই খরচ করেনি। যে তিন লাখ টাকা দেয়া হয়েছে, তা সাব-কন্ট্রাক্টর বেলালের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত শ্রমিক বেলালের হোসেনের অধীনেই কাজ করতেন।
সাব-কন্ট্রাক্টর বেলাল বলেন, ‘শাহের আলী আমার অধীনে কাজ করতো বলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন লাখ টাকা আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কেটে নিয়েছে কোম্পানি।’
নিহত শাহের আলীর বাবা শমসের আলী বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণ দিতে ঢাকায় কোম্পানির অফিসে ডাকে। তিন লাখ টাকা আমাদের হাতে ধরিয়ে কাগজে টিপসই নেয়। সেই টাকা নিয়ে চলে আসি। সে সময় আমার শ্যালক মনিরুলসহ দুই সাব-কন্ট্রাক্টর জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল কাদের দলিলে সই করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দলিলে কী লেখা ছিল তা জানি না। টিপসই দিতে বলছে তাই দিয়েছি। আমার সামনে আট লাখ টাকার কথা উল্লেখ করা হয়নি। ভেবেছিলাম তিন লাখ টাকাই সব।’
দলিলে স্বাক্ষরকারী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আট লাখ টাকা দেয়ার বিষয়টি জানি না। তবে কোম্পানির অফিসে সেদিন আমাদেরকে তিন লাখ টাকা দেয়া হয়।’
অপর স্বাক্ষরকারী সাব-কন্ট্রাক্টর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ রকম ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো দুই-তিন লাখের বেশি টাকা দেয় না। যা দিয়েছে তাতেই আমরা খুশি ছিলাম। কাগজে কি আছে সেটা দেখার উপর ততোটা গুরুত্ব দেইনি।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নূরানী কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার মো. খোকন মিয়া দাবি করছেন, নিহতের পরিবারকে চুক্তি অনুযায়ী আট লাখ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে দলিলে সই নেয়া হয়েছে। আর নিহতের ছোট ভাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাকে কোম্পানিতে চাকরি দেয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, ‘টাকা হস্তান্তরের সময় নূরানী কনস্ট্রাকশন কোম্পানির এমডি খন্দকার গোলাম কবির, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন ও নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব উপস্থিত ছিলেন।’
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের বিষয়ে শ্রম-আইনে নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ থাকলেও মানবিক বিবেচনায় ভুক্তভোগীর পরিবারকে আট লাখ টাকা দেয়ার চুক্তি করি। ক্ষতিপূরণের টাকা হস্তান্তরের সময় আমি অন্য কক্ষে ছিলাম। তাদেরকে আট লাখ টাকা দিতে দেখিনি। তবে টাকা পেয়ে তারা খুশি ছিল। যদি দলিল অনুযায়ী টাকা না পেয়ে থাকে, তাহলে তখন অভিযোগ করলো না কেন?’
প্রকল্পের নিবার্হী প্রকৌশলী আহসান হাবিবও দাবি করেন ক্ষতিপূরণের টাকা হস্তান্তরের সময় তিনি অন্য কক্ষে ছিলেন।
তবে তাদের অন্য কক্ষে থাকার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মো. খোকন মিয়া।
এ বিষয়ে নূরানী কনস্ট্রাকশনের পরিচালক হুমায়ুন কবির তুহিন বলেন, ‘প্রকল্পের পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।’
তবে আট লাখ টাকা দেয়া হয়েছে কিনা; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রকল্প পরিচালক মো. নাছির উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।