সীমানা জটিলতায় থেমে আছে ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দরের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ। চলতি বছরের জুনে শেষ হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদকাল। সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হলে বাড়তে পারে প্রকল্প ব্যয়।
ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া সীমান্ত এলাকায় ২০০৮ সালে দেশের ১৭তম এই স্থলবন্দরটি নির্মাণ করে সরকার।
প্রকল্প পরিচালক ডি এম আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, বিলোনিয়া স্থলবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি মালামাল সংরক্ষণ ও পার্কিং সুবিধার উন্নয়নের জন্য ৩৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকার অবকাঠামো উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে ১০ একর ভূমি উন্নয়নের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়।
তিনি জানান, ২০১৯ সালে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। যে অংশ আন্তর্জাতিক সীমারেখায় অবস্থিত, সে অংশের কাজ বন্ধ করে দেয় বিএসএফ। প্রায় চার বছরেও কোনো সমাধান মেলেনি। এতে বিলোনিয়া স্থলবন্দরের উন্নয়ন থমকে আছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সীমারেখার ১৫০ গজের মধ্যে কোনো দেশ স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারবে না বলে আইন থাকলেও তা মানা হয়নি। বাংলাদেশের সরকার স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিলে জমি অধিগ্রহণের সময় ১৫০ গজের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ফলে এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
‘যে ৩০ শতাংশ জমির মধ্যে জটিলতা নেই সেগুলোয় কাজ চলছে। বাকি ৭০ শতাংশ অংশে কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, ওয়্যারহাউস, ওপেন ইয়ার্ড, বন্দর অফিস, বিশ্রামাগার, ব্যারাক ও ডরমিটরি ভবন, মসজিদ ও ড্রেন নির্মাণ।’
ডি এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘২০১৮ সালের নভেম্বরে তখনকার নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বন্দরের প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের মেয়াদ আরও চার মাস রয়েছে। আশা করছি আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।’
বিলোনিয়া স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: নিউজবাংলা
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বন্দরটি পরিদর্শনে এসে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘বিএসএফ কাজ বন্ধ করেনি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়া পর্যন্ত এটা বন্ধ বলা যাবে না। দুই দেশের পররাষ্ট্র পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আলোচনা শেষে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’
জমি জটিলতার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক সীমারেখার ১৫০ গজের মধ্যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণে গেলে দুই দেশের সম্মতি লাগে। এখানে অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে ভারত অলিখিতভাবে না করে দিয়েছে। এটা নিয়ে দিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় সভা হয়েছে। আমরা আশা করছি এ মাসের মধ্যে এটার সমাধান হবে। আমাদের আরও দুটি স্থলবন্দরে এ সমস্যা ছিল, সেখানেও সমাধান হয়েছে।’
পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাজেল বলেন, ‘২০১৯ সালে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। বন্দরের অবকাঠামোগত জটিলতা তৈরি হলে ভারতীয় বিএসএফ নির্মাণকাজে বাধা দেয়। ফলে নকশার যে অংশ আন্তর্জাতিক সীমারেখায় অবস্থিত, সে অংশের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
‘এ অচলাবস্থা চলছে আড়াই বছর ধরে। বন্দরের জটিলতার কারণে ঠিকাদাররা প্রায় তিন বছর ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। আশা করছি, দুই দেশের নীতিনির্ধারণী মহল বিষয়টির সমাধান করবেন।’
বন্দরের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘শুধু কিছু কর্মকর্তার ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কাজটি শুরুর সময় যদি এসব বিষয় খেয়াল করা হতো, তাহলে আজ এ অবস্থা হতো না। কাজের ধীরগতির কারণে সাধারণ শ্রমিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
‘দ্রুত কাজ শেষ হলে বন্দরের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হবে। বন্দরে যেসব শ্রমিক আছেন তারা প্রতিনিয়ত কষ্ট করছেন। আমরা মনে করেছিলাম যেভাবে কাজ শুরু হয়েছে সমস্যা সমাধান হবে। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। সব থমকে আছে।’
বিলোনিয়া স্থলবন্দরের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া সীমান্ত এলাকায় ২০০৮ সালে দেশের ১৭তম এই স্থলবন্দরটি স্থাপন করে সরকার। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সিদ্ধান্তে স্থলবন্দরটি চালু করা হয়। বন্দরের কার্যক্রম চালুর পরই দুই দেশে ব্যাপক সাড়া পড়ে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, বিএসএফ প্রাথমিক অবস্থায় নির্মাণে সহযোগিতা করে। কিন্তু কাজ অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার পর বিএসএফ মত বদলায়। কাজ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে চিঠি দেয়। এ অবস্থায় মাত্র কয়েক মাস কাজ করার পর নির্মাণকাজের বড় অংশের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।