মার্তা ভাসুতা ২০ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় তরুণী। তার বয়সী অসংখ্য মানুষ এখন তাকে পছন্দ করেন। কারণ, তিনি টিকটকে ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও শেয়ার করেন।
গত সপ্তাহ পর্যন্ত ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্মটিতে ছিল তার কয়েক শ ফলোয়ার। অথচ সপ্তাহ ব্যবধানে এখন তার ফলোয়ার দুই লাখ ছাড়িয়েছে। তিনি কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, কিছু জনপ্রিয় মিউজিকের সঙ্গে মিলিয়েছেন ঠোঁট।
যখন রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে তখন তিনি যুক্তরাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এমন সময় কিয়েভে রাশিয়ার বোমাবর্ষণের খবর দেখেন তিনি।
এরপরই মার্তা টিকটকে শেয়ার করেন ভিডিও। রাতারাতি টিকটকে ইনফ্লুয়েন্সারে পরিণত হন তিনি।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্তা তার টিকটকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ভিডিও শেয়ার শুরু করেন। যা অল্প সময়ের মধ্যেই কোটি মানুষে দেখে ফেলে। টিকটকের অনেক ব্যবহারকারী, বিশেষ করে তরুণরা মার্তাকে মনে করতে থাকেন ইউক্রেনের মাটিতে থাকা খবর প্রদানের অন্যতম কিউরেটর।
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু অন্যদের বোঝাতে চেয়েছি, এই সমস্যা শুধু ইউক্রেনীয়দের নয়, এটা সবার।’
মার্তা খুব ভালোভাবে ইউক্রেনীয় রাশিয়ান ও ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন।
যখনই দেশটিতে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের খবর পান, তখনই মার্তা দেশটিতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাপ টেলিগ্রামে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে ঢুঁ মারেন। সেখানে দেখেন ইউক্রেনীয় অসংখ্য ব্যক্তি সেখানে হাজার হাজার ভিডিও শেয়ার করছেন। মার্তা স্ক্রল করে সেগুলো সংরক্ষণ করতেদ থাকেন।
মার্তা বলেন, ‘আমি যত ভিডিও পাই তাতে আমার ফোন পুরোটাই ভরে যায় সেসব ভিডিওতে।’
এরপর ভিডিওগুলো যাচাই করতে থাকেন, সংশ্লিষ্ট মন্তব্য দেখতে থাকেন। ‘আমি দেখি মানুষজন যা বলছিলেন সেগুলো সত্যি, সেগুলোই এখন ঘটছে এবং ঘটতে চলেছে।’
তিনি টিকটকে ভিডিও পোস্ট করেন এবং ঘুমিয়ে যান।
মার্তা বলেন. ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি টিকটকে দেখি ভিডিও ৯০ লাখবার দেখা হয়েছে।’
স্যাম গ্রেগরি উইটনেসের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এবং কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানবিক সংকটে ব্যবহার করা হয় সেটিও দেখেন। তিনি বলেন টিকটকের অ্যালগরিদম খুবই বেশি টপিক বেইজড।
তিনি বলেন, ‘প্লাটফর্মটিতে আপনার আগ্রহের ভিত্তিতে কনটেন্ট দেখাবে, আপনার ফিডের ওপর নির্ভর করে নয়। আপনি যদি ইউক্রেন নিয়ে কনটেন্ট দেখা শুরু করেন তাহলে দেখা যাবে আপনাকে একই ধরনের কনটেন্ট আরও দেখাবে।’
এমন অ্যালগরিদমের কারণেই মার্তা রাতারাতি একজন ইনফ্লুয়েন্সারে পরিণত হয়ে গেছেন। তার ভিডিওতে এখন এক কোটি ৭০ লাখের মতো লাইক রয়েছে এবং তার ফলোয়ার বেড়ে হয়ে গেছে দুই লাখের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউক্রেন সংকটের সবচেয়ে ভালো ভিডিও পাওয়ার মাধ্যম হতে পারে টিকটক। এমনকি এটি হতে পারে ভুল তথ্য ছড়ানো রোধ করারও মাধ্যম। তবে অবশ্যই এটি যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে।
মার্তা তার ভিডিও বাছাই করার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকেন। এটিকে মার্তা খুব কঠিক কাজ বলেও উল্লেখ করেছেন।
মাধ্যমটিতে যেসব ভিডিও ছড়িয়েছে আছে তার অনেকগুলো আবার ২০১৪ সালের বলে জানান মার্তা। তাই ভিডিও বাছাই করার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন অনেক মানুষই পেশাগত সাংবাদিকতার ওপর ভরসা করছেন না। তাই অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেই ভরসা করছেন।
এটাকে অবশ্য অনেকেই কাজেও লাগিয়েছেন বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।