বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা বরইতলী। এ গ্রামসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে বাস কয়েক হাজার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর, তাদের স্বপ্ন পূরণ করে উদ্বোধন হয়েছে বৌদ্ধদের বিশেষ ধর্মীয় স্থাপনা- বুদ্ধ ধাতু জাদি।
২০১৩ সাল থেকে নিজেদের উদ্যোগে এই জাদি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় বৌদ্ধ নেতারা। পরবর্তী সময়ে বিদেশি দাতা সংস্থা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় প্রায় ৭০ লাখ টাকা জোগাড় হয়। তা দিয়ে হয়েছে স্বপ্নপূরণ, যাকে স্থানীয় বৌদ্ধরা নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্ন জাদি’।
উইকিপিডিয়ার অনুযায়ী, ধাতু বলতে কোনো পবিত্র ব্যক্তির দেহ বা ব্যবহৃত অংশবিশেষ বোঝায়। আর বুদ্ধ ধাতু জাদি বলতে গৌতম বুদ্ধের দেশের অবশিষ্টাংশ দিয়ে নির্মিত স্তূপ বা স্থাপনা বোঝানো হয়।
মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ মন্দিরগুলোর আদলেই তৈরি করা হয়েছে বান্দরবানের স্বপ্ন জাদি। এর উদ্বোধনকে ঘিরে বসেছিল দুই দিনব্যাপী মেলা ও উৎসব। শুক্রবার এ উৎসব শেষ হয়। তাতে যোগ দেন হাজারো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
বান্দরবানের বরইতলীর স্বপ্ন জাদি। ছবি:নিউজবাংলা
স্বপ্ন জাদিতে স্বপ্নপূরণ হয়েছে স্থানীয়দের। তাদের একজন কলেজছাত্রী জ্যোতি চাকমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দানের দ্বারা চিত্ত বিশুদ্ধ হয় ও মোহমুক্তি ঘটে। সব্বে সত্তা সুখিতা হোনতো (জগতে সকল প্রাণী সুখী হোক ও সকল প্রকার দুঃখ থেকে মুক্ত হোক)।’
স্কুলছাত্র জেমসন ত্রিপুরা বলেন, ‘অনেক আশার প্রতিফলন হচ্ছে আমাদের। সে জন্য পুরো মেলা বসে গেছে। কতটা অপেক্ষার পর এটি হচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না। এ উৎসবে সব সম্প্রদায়ের মানুষের সরব উপস্থিতি বলে দেয় বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে কতটা আন্তরিক।’
স্বপ্ন জাদি উদ্বোধন ও মেলা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি ইন্দ্রবংশ ভিক্ষু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্ধলাখ মানুষ নিজেদের ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। অবশেষে স্বপ্ন জাদি আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। এ অঞ্চলের মানুষ আনন্দ ও উৎসবের দিনটি উদযাপন করছে।’
দুই দিনের মেলা ও উৎসবে মানুষের ঢল। ছবি:নিউজবাংলা
স্বপ্ন জাদির নির্মাতা ও রেজু বরইতলী ধর্ম রক্ষিত বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ জ্যোতি স্মৃতি থের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৌদ্ধ তীর্থযাত্রী এবং থেরাভাডা ধাতু জাদিটি বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের জন্য অন্যতম পবিত্র স্থান। আমরা নির্মাণকাজ শুরু করেছিলাম ২০১৩ সালে। ২০২২-এ এসে সে কাজ শেষ হলো। আজ এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাদিটি নির্মাণে বিদেশি কোনো কারিগর লাগেনি। আমি নিজেই এটির সম্পূর্ণ নকশা করেছি। তাই খরচও একটু কম লেগেছে। এটি নির্মাণ করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’