দেশে গর্ভবতী মায়েদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ‘অবস্ট্রেটিক্স ফরসেপ ও ভ্যাকুয়াম এক্সট্রাক্টর’ ব্যবহার। দুঃখজনক হলেও সত্যি, হাসপাতালগুলোতে এ ব্যবস্থা থাকলেও ব্যবহার একেবারেই নেই বললে চলে। এ কারণে গর্ভবতী মায়েরা সিজারিয়ান তথা সি সেকশনের দিকে ঝুঁকছেন। এতে শিশু ও মাতৃমৃত্যু কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে দেশ।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের এ ক্ষেত্রে পরামর্শ, অবস্ট্রেটিক্স ফরসেপ অর্থাৎ শল্যচিকিৎসায় ব্যবহৃত চিমটে বা সাঁড়াশি জাতীয় যন্ত্র ও ভ্যাকুয়াম এক্সট্রাক্টর অর্থাৎ প্রসবের সময় বায়ুর মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে স্বাভাবিক সন্তান জন্মদান পদ্ধতির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
শুক্রবার রাজধানীর এক হোটেলে ‘অবস্ট্রেটিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলিজক্যাল সোসাইটি অফ বাংলাদেশ (ওজিএসবি)’ আয়োজিত ‘অ্যাসিসটেড ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি অর্থাৎ স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে সহায়ক যন্ত্রপাতির ব্যবহার’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
ওজিএসবি সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা বলেন, ‘সিজারিয়ান ও ব্যথামুক্ত ডেলিভারিরে উপকার থাকলেও ক্ষতির দিক অনেক বেশি, তাই এ ধরনের ডেলিভারি কমিয়ে ফরসেপ ডেলিভারির দিকে জোর দিতে হবে।’
অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা বলেন, বিশ্বব্যাপী সিজারিয়ান ডেলিভারি বেড়েছে। বিপরীতে স্বাভাবিক ডেলিভারি কমে গেছে উদ্বেগজনক হারে।
তিনি বলেন, ‘সব জটিলতা দূর করে আমাদের সিজারিয়ান ডেলিভারি কমিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক ডেলিভারির দিকে আমার নজর বাড়াতে হবে, স্বাভাবিক ডেলিভারি বাড়াতে চাইলে প্রথমেই প্রয়োজন সার্ভিস হোল্ডারদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো। পাশাপাশি কমিটমেন্ট ঠিক রেখে তাদের মনিটরিং বাড়াতে হবে।’
নারী স্বাস্থ্যের এ দিকটি চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওজিএসবি বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আরেকটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চলছে। দেশের ১৩টি হাসপাতালে চলছে এ প্রশিক্ষণ। ফলে সার্ভিস হোল্ডাররা অনেক দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। এর মাধ্যমে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি অনেকাংশে বাড়বে।’
গুলশান আরা বলেন, দেশে হাসপাতালে না আসায় শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার বাড়ছে। এখনো ৫০ শতাংশের অধিক ডেলিভারি বাসায় হচ্ছে। ফলে নবজাতক ও মা জরুরি মুহূর্তে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, সিজারিয়ান ডেলিভারি রোধে সেবাদাতাদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত গাইনি বিশেষজ্ঞ ও ওজিএসবির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. টি এ চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান্দ বানু, অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার প্রমুখ।