বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছেলে যুদ্ধে, মায়ায় ইউক্রেন ছাড়েননি গাজীপুরের হাবিব

  •    
  • ৫ মার্চ, ২০২২ ০৯:২৪

ইউক্রেনের হয়ে চলমান যুদ্ধে গেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোর তায়িব। বাবা মো. হাবিবুর রহমান আইয়ুব গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর গ্রামের বাসিন্দা। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি ইউক্রেনে বসবাস করছেন। বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকে স্বজনরা তাদের কাছে চলে যেতে বলেছেন। কিন্তু ছেলে যুদ্ধে গেছে, তাই তার মায়ায় ইউক্রেন ছেড়ে যেতে পারিনি।’

ইউক্রেনের হয়ে চলমান যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোর তায়িব। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে তায়িবের যুদ্ধে যাওয়ার ছবি। সম্প্রতি রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনে বসবাসরত অবস্থায় মাত্র ১৮ বছর বয়সে যুদ্ধে অংশ নিয়ে সাহসী ভূমিকা রাখায় তায়িবকে ‘বীর’ উপাধি দিয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা।

তায়িবের বাবা মো. হাবিবুর রহমান আইয়ুব গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর গ্রামের বাসিন্দা। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি ইউক্রেনে বসবাস করছেন। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর পড়াশুনার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় ইউক্রেনে যান হাবিব। ২০ বছর আগে পান ইউক্রেনের পাসপোর্ট। পরে সেখানে বিয়ে করেন এলোনা নামের এক ইউক্রেনীয় নারীকে।

তাদের দুই সন্তান ১৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ তায়িব ও ৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ কারিম। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের নিপ্রস্কি শহরে বসবাস করেন তারা। সেখানে হাবিবের রয়েছে তৈরি পোশাকের ব্যবসা। হাবিবের বড় ছেলে তায়িব নিপ্রস্কি শহরের কিয়েভেস্কি টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির স্নাতকের শিক্ষার্থী।

ইউক্রেন থেকে নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন তায়িবের বাবা হাবিবুর রহমান। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইউক্রেনের পক্ষে তায়িবের যুদ্ধে অংশ নেয়া ও যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

তায়িব ইউক্রেনের হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেছে জানিয়ে মোহাম্মদ হাবিব বলেন, ‘যে বয়সে পড়াশোনা করে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার কথা; সেই বয়সে ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধে গেছে আমার বড় ছেলে তায়িব। রাশিয়া যেদিন ইউক্রেনে আক্রমণ চালিয়েছে, সেদিন সকালেই তায়িব যুদ্ধে অংশ নিতে বাসা থেকে বের হয়। যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখায় ইউক্রেনের সেনারা তায়িবকে বীর উপাধি দিয়েছেন।’

হাবিব বলেন, ‘সবাই মিলে যখন রাশিয়ার ট্যাংকে হামলা করেছে, সে সময় আমেরিকার সরবরাহ করা কামানবিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ান সেনাদের ট্যাংক ধ্বংস করে দেয়া হয়। সে সময় ট্যাংক থেকে লাফিয়ে পড়ে রাশিয়ার পাঁচ সেনা পালানোর সময় চারজনকে গুলি করে মারা হয়। আরেকজন রুশ সেনা পালিয়ে যাওয়ার সময় আমার ছেলে তায়িব সাহসিকতা দেখিয়ে ওই সেনাকে জীবিত আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে আসে।’

ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমরা ইউক্রেনে মহাবিপদে আছি। রাশিয়ান সেনারা প্রতিনিয়ত বোম্বিং করছে, রকেট নিক্ষেপ করছে। বাড়ি-ঘর ও সরকারি স্থাপনা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের আশপাশের সবকিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বোমার শব্দে রাতে ঘুমাতে পারি না। রাতের বেলা মাটির নিচের বাংকারে এবং দিনের বেলায় বাসায় আত্মগোপনে থেকে জীবন কাটাচ্ছি। পকেটে পর্যাপ্ত টাকা থাকা সত্ত্বেও কোথাও খাবার মিলছে না।’

হাবিব বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকে স্বজনরা তাদের কাছে চলে যেতে বলেছেন। কিন্তু ছেলে যুদ্ধে গেছে, তাই তার মায়ায় ইউক্রেন ছেড়ে যেতে পারিনি।’

তায়িবের চাচা মোহাম্মদ রাসেল ইতালিপ্রবাসী। গত জানুয়ারিতে ছুটিতে তিনি দেশে এসেছেন।

নিউজবাংলাকে রাসেল জানান, বাবা-মায়ের যুদ্ধে না যাওয়ার অনুরোধ সত্ত্বেও তায়িব যুদ্ধে অংশ নিতে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। জয়ী হয়ে বীরের বেশে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আসবেন- এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তায়িব।

এত কম বয়সে যুদ্ধে যাওয়ায় সাহসী তায়িবের জন্য গর্ববোধ করছে গ্রামবাসী। যুদ্ধে জয়ী হয়ে আসবে তায়িব- এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসী ও স্বজনদের।

প্রতিবেশী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে আমাদের পূর্বসূরিরা। তায়িবের বাবা বাংলাদেশের সন্তান। তায়িবের শরীরে বাঙালির রক্ত প্রবাহমান। সে যেন ইউক্রেনের নাম রাখতে পারে। যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে মা-বাবার বুকে ফিরে আসতে পারে। এটা বাংলাদেশের জন্যও একটা গর্ব।’

তায়িবের দাদি নুরুন্নাহার বলেন, ‘আমার নাতিকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখুক। আমার ছেলে ও তার পরিবার যেন সুস্থ থাকে, নিরাপদে থাকে প্রতিদিন সেই দোয়া করি।’

এদিকে তায়িব ও তার পরিবারের মঙ্গল কামনায় গ্রামের বাড়িতে মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করেছেন স্বজনরা।

এ বিভাগের আরো খবর