জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা, মরুকরণ, দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা ও তামাক চাষের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা রোধে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
একই সঙ্গে এসব দুর্যোগের শিকার জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি ও অনুন্নয়নের ধারা জিইয়ে রেখে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কখনোই টেকসই করা সম্ভব না বলেও মনে করে সংগঠনটি।
অর্থনীতি সমিতির ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩ প্রস্তুতি আলোচনা: খুলনা অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
শুক্রবার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে বাজেট প্রণয়নবিষয়ক এই মতবিনিময় সভায় স্থানীয় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, আইনজ্ঞ, কৃষকনেতা, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক কর্মী, ব্যবসায়ীরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সভায় অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, ‘জাতীয় বাজেট সংবিধানের মৌলিক চেতনার অধিকাংশই এখন আর ধারণ করে না। সংবিধানে আঞ্চলিক উন্নয়ন সমতা নিশ্চিতকরণের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও তা মানা হয় না। সে অর্থে সরকারের ঘোষিত জাতীয় বাজেট অনেকাংশেই অসাংবিধানিক।’
তিনি বলেন, ‘সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন যেকোনো দেশের টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনার সংস্কৃতি প্রকৃত অর্থে সংবিধানকে শ্রদ্ধা ও মান্য করার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পথরেখা।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় বাজেট বরাদ্দে আঞ্চলিক বৈষম্যের চিত্রের বিপরীতে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট অনেক বেশি জনবান্ধব ও বৈষম্যহীন।’
খুলনার সরকারি ফুলতলা মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দেশে দারিদ্র্য হ্রাস পেলেও আঞ্চলিক পর্যায়ে দারিদ্র্য নিরসনের গতি সব অঞ্চলে সমান নয়, এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো।’
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা, মরুকরণ,জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোনের দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি তামাক চাষের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা রোধে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।
তাদের মতে, পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পেলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশেষত খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও নড়াইল জেলায় অদূর ভবিষ্যতে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
আলোচনায় যশোর-খুলনা-সাতক্ষীরার সংযোগস্থলের ভবদহ অঞ্চলসহ ছোট-বড় ৫২টি বিল, ১২০টি গ্রাম এবং কেশবপুর, মনিরামপুর, অভয়নগর উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় দীর্ঘদিনের ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিরসনে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) পদ্ধতি বাস্তবায়ন করার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় নদ-নদী, খাল-বিল খনন ও সংস্কার, বন্ধ পাটকল চালু, তামাক চাষ বন্ধ করা এবং কৃষক বীমা চালু করার উপর জোর দেন বক্তারা।
একই সঙ্গে আলোচকরা রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা, পদ্মা সেতু ও মোংলা-পায়রা-ভোমরা-বেনাপোল-নওয়াপাড়া বন্দর নিয়ে সমন্বিত কর্মসূচি, শিল্পোন্নয়নের জন্য গ্যাস সরবারাহ, সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প, উপকূলজুড়ে মিঠাপানির জলের প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জলাধার নির্মাণ, লবণসহিঞ্চু কৃষি ফসলের জাত উদ্ভাবন করাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দাবি করেন।
তারা অভিযোগ করেন, ব্যাপক সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকার পরেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর প্রতি স্বাধীনতাপরবর্তী সব সরকারের অবহেলা দুর্ভাগ্যজনক।