ইউক্রেনে আটকা পড়া ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ২৮ নাবিকের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়ে ফের ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন শুক্রবার একটি গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘২৮ নাবিক ও হাদিসুর রহমানের মরদেহ রোমানিয়ায় নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে আটকে পড়া বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের ২৮ নাবিককে উদ্ধারের পর মলদোভা হয়ে রোমানিয়ায় নেয়া হচ্ছে। তাদের সঙ্গে হাদিসুর রহমানের মরদেহও রয়েছে। রোমানিয়া থেকে তারা দেশে ফিরবেন।’
পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলছেন, পোল্যান্ড নাকি রোমানিয়া- তা এখনও চূড়ান্ত নয়।
রোমানিয়ায় কোনো দূতাবাস না থাকলেও বুখারেস্টে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সেখানে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত জানান, রোমানিয়ায় নাবিক-ক্রুদের আনার বিষয়ে তিনি এখনও অবগত নন। এতে নাবিকদের ইউক্রেন থেকে ফেরানোর প্রস্তুতি নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৮ নাবিক-ক্রু ও হাদিসুরের মরদেহ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদক পোল্যান্ড ও বুখারেস্টে বাংলাদেশের দুই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এ সময় পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের নাবিক-ক্রুদের ইউক্রেন থেকে অন্য দেশে নেয়ার বিষয়ে কাজ করছি। তাদের রোমানিয়া বা পোল্যান্ডে নেয়া হবে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনে, তাই পরিস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।
‘২৮ নাবিক-ক্রু ও হাদিসুরের মরদেহ অন্য দেশে নিরাপদে নিয়ে যাওয়া ইস্যুতে ইউক্রেন ও রাশিয়া সরকারের কোনো সাহায্য এখনও পাইনি, এমনকি যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি। ইউক্রেন থেকে অন্য বাংলাদেশিদের যে চ্যানেলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, সে চ্যানেলটির মাধ্যমেই নাবিকদের ফেরানোর চেষ্টা করছি।’
রোমানিয়ায় নাবিকদের ফেরানোর প্রস্তুতির বিষয়ে বুখারেস্টে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী বলেন, ‘নাবিকদের রোমানিয়ায় আনার বিষয়ে আমাদের দূতাবাস অবগত নয়। এ ব্যাপারে আমাকেও কিছু নিশ্চিত করে জানানো হয়নি।’
এ বিষয়ে তিনি পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা আরও বলেন,‘ সেখানে (ইউক্রেনে) কিছুটা ঝামেলা হয়েছে। তাই ইউক্রেন থেকে তাদের অন্য দেশে পাঠানো আজ সম্ভব হচ্ছে না। কাল বা এর পরদিনও হতে পারে।’
জাহাজ থেকে বৃহস্পতিবার ২৮ নাবিককে সরিয়ে নেয়ার পর তারা অলিভিয়া বন্দরের কাছে নিরাপদ স্থানে বাংকারে আছেন।
শুক্রবার সকালে জাহজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক তুহিন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন জানিয়ে তার মেজো ভাই ওমর শরীফ সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা সবাই সুস্থ আছেন। সেখানে বেশ ঠান্ডা, তাই সবাই বাংকারেই আছেন। মরদেহটিও ফ্রিজারে রাখা আছে।’
ইউক্রেনের বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজে হামলার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, 'বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধির ওপর কারা হামলা করেছে, সে বিষয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত নই।'
তবে বৃহস্পতিবার এ হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। পশ্চিমা মিডিয়াও এ জন্য রাশিয়ার নৌবাহিনীকে দায়ী করে।
যদিও ঢাকার রুশ দূতাবাস এক বিবৃতিতে এ ঘটনার জন্য ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদীদের দায়ী করে তদন্তের আশ্বাস দেয়।
দূতাবাস জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হটার সময় এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে।
এর আগে বুধবার রাতে বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলায় জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান নিহত হন।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে আটকে পড়া এই জাহাজের ২৮ নাবিককে উদ্ধার করে সেফ জোনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মিসর সফররত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এক ভিডিও বার্তায় নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের এ জাহাজটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছে। জাহাজটির ইউক্রেন থেকে সিরামিকের কাঁচামাল নিয়ে ইতালি যাওয়ার কথা ছিল। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আর ফিরতে পারেনি। বন্দরে ২৯ জন নাবিক নিয়ে আটকা পড়েছিল জাহাজটি।