বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাওর রক্ষা বাঁধ: নির্মাণকাজ নিয়ে ফের নানা অভিযোগ

  •    
  • ৪ মার্চ, ২০২২ ১৭:৫৯

জগন্নাথপুরের নলুয়া হাওরের ৬ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি ছাদিকুর রহমান জানান, বাঁধের কাজের জন্য প্রথমে পিআইসিকে বরাদ্দের ২৫ শতাংশ টাকা দেয়া হয়। বাকী টাকা মিলে কাজের শেষে। পিআইসির সদস্যদের বেশিরভাগ স্থানীয় কৃষক। নিজের পকেট থেকে বাঁধের জন্য টাকা খরচের সঙ্গতি নেই বেশিরভাগেরই।

হাওরবেষ্ঠিত সুনামগঞ্জে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দেখা দেয় অকাল বন্যা। মার্চের দিকে শুরু হওয়া এই বন্যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় হাওরের একমাত্র ফসল বোরো ধান। ধান রক্ষায় প্রতি বছর হাওর অঞ্চলে নির্মাণ করা হয় ফসল রক্ষা বাঁধ।

ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয় এই বাঁধের কাজ। প্রতি বছরই এই বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

এবারও একই অভিযোগ তাদের। নির্ধারিত সময়ে এবারও বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় ধান নিয়ে শঙ্কিত হাওরপাড়ের কৃষকরা।

জেলার জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওরে ৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে বাঁধ নির্মাণের সময়সীমা। তবে এখনও ১৫ শতাংশ কাজ বাকি বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। অনেক জায়গায় এখনও মাটিই ফেলা হয়নি।

নলুয়া হাওরপাড়ের কৃষক মখদ্দস আলীর অভিযোগ, ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে গেছে, অথচ এখন পর্যন্ত বাঁধে মাটিই ফেলা হয়নি। মাটি ফেলে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। অথচ মার্চ থেকেই বৃষ্টি-বন্যা শুরু হবে। ফসল হারানোর শঙ্কা মখদ্দসের মতো জেলার বেশিরভাগ কৃষকেরই।

হাওর নিয়ে কাজ করা করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা’। তাদের হিসাবে, বাঁধের কাজ বাকি ৩৮ শতাংশ।

পাউবোর দাবি, কাজ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। বাকী কাজ ১০ মার্চের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা জানান, হাওরের পানি দেরিতে নামা, কয়েকদফা বৃষ্টি, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, এক্সক্যাভ্যাটরের অপ্রতুলতাসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে বাঁধের কাজ শেষ করা যায়নি।

কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৭২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ৫৩২ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২৪ কোটি টাকা।

সবশেষ ২০১৭ সালে অকাল বন্যায় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় হাওরের বিস্তৃর্ণ বোরো ফসল।

সরকারি হিসাবে, বাঁধ ভেঙে ১৫৪ হাওরের ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমির ফসল।

সে বছর ফসলহানির পরপর বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে বাঁধের কাজ করানো হয়। পিআইসিতে প্রশাসনের কর্মকর্তা, কৃষকসহ স্থানীয় উপকারভোগীরাও রয়েছেন।

এরপরও বাঁধ নিয়ে অভিযোগ ফুরায়নি।

জগন্নাথপুরের নলুয়া হাওরের ৬ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি ছাদিকুর রহমান জানান, পিআইসির মাধ্যমে বাঁধের কাজ করানোয় কিছু বিপত্তি দেখা গেছে। বাঁধের কাজের জন্য প্রথমে পিআইসিকে বরাদ্দের ২৫ শতাংশ টাকা দেয়া হয়। বাকী টাকা মিলে কাজের শেষে, কিন্তু পিআইসির সদস্যদের বেশিরভাগ স্থানীয় কৃষক। নিজের পকেট থেকে বাঁধের জন্য টাকা খরচের সঙ্গতি নেই বেশিরভাগেরই। এসব কারণে কাজে দেখা দেয় ধীরগতি।

ছাদিকুর বলেন, ‘সময়মতো টাকা না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারিনি। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা পেয়েছি। এখন টাকা ধার এনে কাজ করাতে হচ্ছে।’

বাঁধ নির্মাণ কাজ নিয়ে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় সম্প্রতি জরিপ চালায় পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজার তত্ত্বাবধানে চালানো এই জরিপের ফলে জানা যায়, নির্ধারিত সময়সীমা শেষে মাত্র ৬৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

জরিপে ফল জানাতে বুধবার দুপুরে সিলেট নগরে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।

এর সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, ‘জরিপে আমরা দেখেছি, এ পর্যন্ত অনেক বাঁধে মাটির কাজ শেষ হয়নি। মাটি দুরমুজ (কম্পেকশন) ও ঘাস লাগানো হয়েছে আরও কম সংখ্যক বাঁধে। এছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ৫০ মিটার দূর থেকে বাঁধের মাটি আনার কথা থাকলেও ৩৫ ভাগ ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি।’

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়া কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রকল্প প্রাক্কলণ ও পিআইসি গঠনে বিলম্ব, অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, হাওর থেকে দেরিতে পানি নামা ও ড্রেজার মেশিনের স্বল্পতার কারণে এমনটি হয়েছে। এছাড়া বাঁধের মাটির দুষ্প্রাপ্যতা এবং প্রকল্প গঠনে অনিয়মের কারণেও বিলম্ব হচ্ছে।’

বছর বছর বাঁধ নির্মাণের বদলে উজানে ও ভাটিতে নদী খনন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন কাসমির।

সেদিনই ধান হারানোর শঙ্কায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে মানববন্ধন করেছে ‘হাওর বাচাঁও আন্দোলন’ নামে সংগঠন।

এর সদস্য সচিব হোসাইন শরীফ বিপ্লব বলেন, ‘আমাদের উপজেলায় বাঁধের কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে ফসল নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন উপজেলার সব কৃষক। বাঁধ নির্মাণে গাফিলতির জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পিআইসির সভাপতি রায়হান কবির বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণ কাজ আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছি। এ ব্যাপারে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না।’

১০ মার্চের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘মাটি ফেলার কাজ মোটোমুটি শেষ... কৃষকদের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বৃষ্টি শুরুর আগেই কাজ শেষ হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর