বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বরই চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

  •    
  • ৪ মার্চ, ২০২২ ১১:১১

বরই একটি সুস্বাদু ফল। দেখতেও আকর্ষণীয় এ ফলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় বরই চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। এরই মধ্যে এ ফল চাষে সফলতাও পেয়েছেন অনেকে।

অল্প পুঁজি ও ঝুঁকি কম থাকায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বরই চাষ করে অনেকেই সফালতা পেয়েছেন। বরইয়ের বাম্পার ফলনে খরচের চেয়ে লাভের পরিমাণ দুই থেকে তিন গুণ। এতে খুশি ঝালকাঠি, ফেনী ও ময়মনসিংহের চাষিরা। তাদের অনুসরণ করে জেলাগুলোতে দিন দিন এ ফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে অন্য চাষিদেরও।

ঝালকাঠিতে বরই চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা

ঝালকাঠিতে সম্প্রসারিত হচ্ছে বরই চাষ। জমির আইলে পরীক্ষামূলকভাবে বরই চাষে সফলতার পর কেওড়া ইউনিয়নের সংগ্রামনীল গ্রামের বিজান মণ্ডল ৩ বছর আগে বাণিজ্যিকভাবে বরইয়ের চাষ শুরু করেন। পতিত জমিতে বরই চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি।

নিউজবাংলাকে জানান, অন্যের কাছ থেকে তিন বছর আগে এক বিঘা জমি ইজারা নিয়ে কুল চাষের উপযোগী করেন। সাতক্ষীরা থেকে বাউ কুল, আপেল কুল, নারিকেল কুল এবং বল সুন্দরী কুলের চারা এনে বাগানে রোপণ করেন। মাত্র এক বছরেই বাগানের বরই গাছে বাম্পার ফলন ধরেছে।

এ বছরও বরইয়ের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছ। আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে বরই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

নারিকেল ও আপেল কুল পাইকারি ৯০ টাকা আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। বাউকুল পাইকারি ৬০ টাকা কেজি আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে।

বিজান মণ্ডল বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তারা মোগো দিকে যতি তাহাইতো, হেলে ফলন আরও বেশি পাইতাম। মোরা মালিক আর শ্রমিকরা ভালোভাবে বাঁচতে পারতাম।’

এই বাগানে জমি তৈরিসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ১৩৪টি বরই গাছ লাগাতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে দ্বিগুণ লাভ হবে বলেও জানান তিনি।

দাম ভালো হওয়ায় বাগানেই পাইকারি বিক্রি করা হয় বরই। ছবি: নিউজবাংলা

বাগান পরিচর্যাকারী নিতাই মণ্ডল বলেন, ‘বরই চাষ অত্যন্ত লাভজনক। কম খরচে অধিক লাভ করা যায়। তাছাড়া বরই চাষে তেমন কোনো ঝুঁকিও নেই।’

বরই চাষে বিজানের সফলতা দেখে এখানকার অন্যরাও আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান। চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করারও আশ্বাস দেন তিনি।

এলাকার আরেক বাগানমালিক মোহাম্মদ আবিয়ান হাসান বলেন, ‘স্থানীয়দের বিষমুক্ত ফল খাওয়ানোর লক্ষ্যে বরই চাষ শুরু করেছি। কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে আগামীতে ব্যাপকভাবে বরই চাষ করব।

‘গত দুবছর করোনা ও লকডাউন থাকায় ফলন অনুযায়ী বিক্রি কম হয়েছে। আশা করি এ বছর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।’

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, এখানকার মাটি বরই চাষের উপযোগী। এ ফল চাষে কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সবভাবে সহযোগিতা করা হবে।

বরইয়ের বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরা

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার চাষি আবু সাঈদ মো. মশিউর রহমান বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষে সাফল্য পেয়েছেন। তিন একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ৮ শতাধিক গাছ লাগিয়েছেন। এসব গাছে বাম্পার ফলন হয়েছে।

খরচ বাদে তিন গুণ বেশি লাভের সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। তার এমন সাফল্য দেখে অন্যরাও বরই চাষে ঝুঁকছেন।

উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের সামানিয়াপাড়া গ্রামে মুশিউর রহমানের বরই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, থরে থরে বরইয়ে গাছের ডালগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে। শ্রমিকরা বরই তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন, বাগান থেকেই বরই কিনে নিচ্ছেন পাইকাররা।

পাইকার আসাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্রেতারা ফ্রেশ বরই পছন্দ করেন তাই সরাসরি বাগান থেকে বরই সংগ্রহ করি। এতে ত্রেতারা ভালো বরই পাচ্ছেন, আমরাও একটু বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারি। এ ছাড়া এক বাগানেই ৮ জাতের বরই পাওয়ায় এ বাগান থেকে কিনে বাজারে বিক্রি করি।’

ব্যাপক ফলন হওয়ায় বরইয়ের ভারে মাটিতে নুয়ে পড়েছে গাছ। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয় আসাদুল হক নামে এক কৃষক বলেন, ‘মশিউর রহমান বরই চাষে চমক দেখিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে বরই বিক্রি করে তিনি লাভবান হচ্ছেন। খরচ বাদে তিন গুণ বেশি লাভ করবে বলে জানিয়েছেন। আমিও তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। আগামীতে উন্নত জাতের বরইয়ের চারা লাগাব।

মিশ্র জাতের বরই চাষে সাফল্য পাওয়া আবু সাঈদ মো. মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইউটিউব দেখে বরই চাষে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। দুই বছর আগে উন্নত জাতের ৮ শতাধিক বরই গাছ লাগিয়েছি। এসব গাছে অল্প বয়সেই প্রচুর বরই হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাগানে ছয়জন শ্রমিক সার্বক্ষণিক কাজ করে। বাগান পরিচর্যাসহ দুই বছরে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবারই প্রথম বরই ধরেছে। জাত বেঁধে একেকটি গাছে ২০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত বরই হয়েছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় ১২ লাখ টাকার মতো বিক্রি করা যাবে। ফলে খরচ বাদ দিলেও ৯ লাখ টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া বাগানে পেঁপে, পেয়ারা ও লেবুসহ বিভিন্ন ফলের গাছও রয়েছে।’

এ বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মশিউর এখন অভিজ্ঞ বরই চাষি। তিনি বরই চাষে সফলতা পাওয়ায় আরও অনেকে বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।’

বরই চাষে স্বপ্ন বুনছেন আছমত আলী

লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা আছমত আলী। মেঘনার ভাঙনে সব হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ফেনীতে। সদর উপজেলার কাজির বাগ ইউনিয়নে পরিবারসহ থাকেন।

দীর্ঘদিন রিকশা ও ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে অবশেষ ঝুঁকেছেন কৃষিতে। স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের পরামর্শে নামেন কুল চাষে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ফেনীতে এই প্রথম বিভিন্ন স্বাদের কুল চাষ হচ্ছে।

৪০ শতক জমিতে বল সুন্দরী, কাশ্মীরি, বাউকুল, আপেল কুলসহ নানা জাতের কুল চাষ করছেন তিনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কুলের ভালো ফলন হয়েছে। কুলের ভারে নুয়ে পড়ছে গাছগুলো। নিচে বাহারি শাকসবজি। ওপরে ছাউনি আর চারপাশে বাঁশ দিয়ে ঘেরা হয়েছে।

একই জায়গায় কুল চাষের পাশাপাশি সিম, টম্যাটো, বেগুন, আলু, করলা, মেটে আলু, লাল ও পালংশাকসহ শীত ও গ্রীষ্মকালীন নানা সবজির আবাদ করছেন।

৭০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে এই বছরে বিনিয়োগের টাকা তুলে আগামী ১০ বছরে এ লাভ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন তিনি।

বাগানে বরইয়ের পাশাপাশি চাষ করা যায় অন্যান্য অনেক সবজি। ছবি: নিউজবাংলা

কৃষক আছমত আলী বলেন, ‘এই বছর যে টাকা বিনিয়োগ করেছি সে টাকা তুলতে পারব। তবে আগামী ১০ বছর আর কোনো বিনিয়োগ করতে হবে না। আর লাভ তো পাবই। কুল চাষের পাশাপাশি একই জায়গায় অনেক কিছু করা সম্ভব।

‘আমি মনে করি আমার দেখাদেখি জেলার অন্য কৃষকরাও কুল চাষাবাদে ঝুঁকবেন। ফেনীর মাটি ও জলবায়ু এর চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী।’

অন্য কেউ কুল বাগান কীভাবে করবেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত বছরের মার্চ থেকে চাষাবাদ শুরু করেছি। পাবনা থেকে বল সুন্দরী, কাশ্মীরি, আপেল কুল ও বাউকুল জাতের ১০০ চারা এনে রোপণ করেছিলাম।

‘এর মধ্যে বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি প্রতি পিস চারা ৮০ টাকা, আপেল কুল ১৫ টাকা, বাউকুল চারা ১২ টাকা দরে কিনেছিলাম। প্রতি গাছে ৯ থেকে ১২ কেজি বরই ফলন হয়েছে। প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বাগান থেকে অনেকে এসে কুল কিনে নিচ্ছে। চলতি মৌসুমে বাগান থেকে ১ লাখ টাকার বেশি কুল বিক্রি করতে পারব আশা করছি।’

তিনি জানান, চারা, চারপাশের বেড়া, ওপরের বিশেষ নেট ও জমি তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজে ৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এর মধ্যে কিছু স্থায়ী খরচ রয়েছে যা পরের বছরগুলোতে আর লাগবে না। লাভের পরিমাণ পরের বছরগুলোতে আরও বাড়বে।

ফেনীর কৃষক আছমত আলীর বরইয়ের বাগান। ছবি: নিউজবাংলা

আছমত আলী জানান, কুল চাষ করতে গিয়ে আমার বহু টাকা ঋণ হয়েছে। এ ছাড়া অন্যের জমি ইজারা নিয়েছি, থাকছিও ভাড়া বাড়িতে। তাই সরকাররের পক্ষ থেকে কিছু সহযোগিতা করলে উপকার হবে। অন্তত তিনি যেন মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু দেন।

ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ‘কৃষক আছমত আলী এক বছরে যে লাভ পাচ্ছেন তাতে দেশও লাভবান হচ্ছে। পাশাপাশি দেশ বাণিজ্যিক কৃষিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে চাষিরা এ বছরের চেয়ে পরের বছরগুলোতে দ্বিগুণ লাভবান হবেন বরই চাষে।’

প্রণোদনার ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি প্রণোদনা দেয়ার সুযোগ নেই। তবে তাকে অফসিজনের তরমুজের বীজ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।’

কৃষক আছমত আলীর এ কুল বাগান পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল-হাসান। তিনি বলেন, কুল চাষে তার লাভ ও উৎপাদন দেখে অন্যান্য কৃষকও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ওই কৃষকের স্থায়ী বাসস্থান নেই বলে জেনেছি। তার ব্যাপারটি নিয়ে আমরা ভাবছি।’

এ বিভাগের আরো খবর