করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে নানামুখী সুবিধা দিচ্ছে সরকার। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ পরিশোধেও বিভিন্ন সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ।
খেলাপি ঋণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ এসব ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে নয়টি ব্যাংক।
এ নয় ব্যাংকের তালিকায় চারটি সরকারি ও বেসরকারি পাঁচটি ব্যাংক রয়েছে।
২০২১ সাল শেষে এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ২২ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এছাড়া সার্বিকভাবে ব্যাংকখাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১৪ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ঘাটতির তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, বেসিক, অগ্রণী, রূপালী এবং বেসরকারি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইএফআইসি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের নাম ।
সরকারি চার ব্যাংক
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে সরকারি চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১৮ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনতা ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এর আগে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ১১৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এ হিসেবে তিন মাসে দ্বিগুণের বেশি অর্থাৎ পাঁচ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা ঘাটতি বেড়েছে।
প্রভিশন ঘাটতিতে জনতার পরই রয়েছে বেসিক ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১১৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৩ হাজার ৬৬৩ কোটি ৩ লাখ টাকা।
অগ্রণী ব্যাংকের ২ হাজার ৬১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা; সেপ্টেম্বরে ছিল ২ হাজার ১২৮ কোটি ৭ লাখ টাকা।
রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ২০৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ঘাটতি, যা তিন মাস আগে ছিল ৯২২ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
বেসরকারি ব্যাংক
বেসরকারি খাতের পাঁচ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি তিন হাজার ৬১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভিশন ঘাটতি ন্যাশনাল ব্যাংকের ৩ হাজার ২৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা; তিন মাস আগেও ছিল দুই হাজার ৩৮৫ কোটি ৬ লাখ টাকা।
এছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ৩১৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা; তিন মাস আগে ছিল ৪৭১ কোটি ৭১ লাখ।
ডিসেম্বর নতুন করে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্স (আইএফআইসি)। ব্যাংকটির ঘাটতি ২১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
মিচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ঘাটতি ২০৫ কোটি ১০ লাখ; সেপ্টেম্বরে ছিল ১৫৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ঘাটতি ১৪৯ কোটি টাকা, তিন মাস আগে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৯৯ কোটি টাকা।
সার্বিক প্রভিশন
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণকরা ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
২০২০ ডিসেম্বর শেষে দেশের খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে মন্দ ও নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৮০ হাজার ৬৫৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা কিন্তু সংরক্ষণ করতে পেরেছে ৬৬ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। এর ফলে পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১৪ হাজার ৩৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা।