চা চাষের কথা উঠলেই একটা সময় চোখের সামনে ভেসে উঠত সিলেটের পাহাড়ে বাগানের পর বাগানে সবুজের সমারোহ। দিনে দিনে সে সীমারেখা অতিক্রম করে চা চাষের বিস্তৃতি এখন দেশের উত্তরাঞ্চলে। চা চাষে বাড়ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা।
উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা ইউনিয়নের শুক নদীর তীরে গড়ে উঠেছে চা বাগান। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে নিজের সাড়ে তিন বিঘা জমিতে চা চাষে নামেন মাহমুদ হাসান। শুরুটা পরীক্ষামূলক হলেও তিন বছরের মাথায় বাজিমাত করেছেন তিনি।
মাহমুদ হাসান জানান, প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করতেন তিনি। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার। তিন বছর আগে পঞ্চগড়ের আটোয়ারির মির্জাপুরের একটি টি স্টেট থেকে ১০ হাজার চা গাছের চারা কেনেন। সেখান থেকে চা চাষে প্রশিক্ষণ নেন। দ্বিতীয় বছরে একবার ও তৃতীয় বছরে সাতবার চা পাতা কেটেছেন তিনি। দুই বছরই চা পাতা বিক্রি করেছেন সাড়ে ৩ লাখ টাকার।
তিনি বলেন, ‘চা বাগান করতে একটু বেশি দামে চারা কিনতে হয়েছে। এখন দাম কম। বাগানটি করতে তিন বছরে ধাপে ধাপে আমার ৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এ বছর আরও ৪ লাখ টাকার চা পাতা বিক্রির আশা করছি।
ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা ইউনিয়নের শুক নদীর তীরে মাহমুদ হাসানের চা বাগান। ছবি: নিউজবাংলা
‘এখন আমি একটি বিষয়ে শঙ্কিত। কারণ চা বাগানটি নদীর তীরে। এরই মধ্যে আমার চার-পাঁচ কাঠা জমি নদীতে চলে গেছে। বাঁধ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর উদ্যোগ নিলে এ অঞ্চলে চা বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। নদীভাঙনের ভয়ে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনেকে চা বাগান করছেন না।’
মাহমুদ বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে চা ফ্যাক্টরি হলে চা চাষিরা আরও লাভবান হতেন। বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করলে চা চাষি অনেক বাড়বে। এ ছাড়া এ অঞ্চলে চা বোর্ডের নজর দেয়া খুব প্রয়োজন। শুধু প্রশিক্ষণের অভাবে চা চাষে সম্ভাবনাময় এই জেলা এগোতে পারছে না।’
উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসানের কাছে চা চাষে আগ্রহীরা পরামর্শ নিতে বাগানে আসেন। এ সময় কথা হয় আজিজুল হাসানের সঙ্গে।
আজিজুল বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে চা চাষ একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। এসেছি পরামর্শ নিতে। আমিও চা চাষ করতে চাই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের আবহাওয়া চা চাষের জন্য উপযুক্ত। এখন পর্যন্ত জেলায় ১৩০ হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এখানকার মাটি বেলে দোআঁশ। প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় তবে পানি জমে না এমন জায়গায় চা বাগান করতে হয়।’
পোকা ও মাকড়শা যেন চা গাছের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য সার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার করতে হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন।