বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৭ মাসে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকার এলসি

  •    
  • ৩ মার্চ, ২০২২ ২২:০৯

‘পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বেশ কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ পুরোদমে চলছে। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম আমদানির জন্যও এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে। এটা খুবই ভালো লক্ষণ।’

করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমার পর দেশে পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার হিড়িক পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৫ হাজার ২৩৬ কোটি (৫২.৩৬ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেশি।

বর্তমান বিনিময়হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৪ লাখ ৫০ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের চার ভাগের তিন ভাগ বা ৭৫ শতাংশ।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে এমন উল্লম্ফন দেখা যায়নি।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের এই সাত মাসে ৩৫ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার পণ্য আমদানির এলসি-সংক্রান্ত হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, এই সাত মাসে গড়ে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে।

আর এলসি খোলার এই হিড়িকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভেও টান পড়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় সেসব দেশের মানুষ আগের মতো পণ্য কেনা শুরু করেছেন। দেশের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে।

সে চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা নতুন উদ্যমে উৎপাদন কর্মকাণ্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সে কারণেই শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ (ক্যাপিটাল মেশিনারি) সব ধরনের পণ্য আমদানিই বেড়ে গেছে; বেড়েছে এলসি খোলার পরিমাণ।

এ ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ অন্য সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এলসি খুলতে বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে বলে জানান তারা।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানির জন্য ৬ হাজার ৭০৪ কোটি (৬৭.০৪ বিলিয়ন) ডলারের ঋণপত্র (এলসি) খুলেছিলেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। ওই অঙ্ক ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এলসি খুলতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়েছে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড় ও অন্য পণ্য আমদানিতে; সেটা ৭৬৬ কোটি ৬১ লাখ (৭.৬৬ বিলিয়ন) ডলার, গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৪৬ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি।

সুতা আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৩০৩ কোটি ডলারের; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তুলা ও সিনেথেটিক ফাইবার আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের। বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

রাসায়নিক দ্রব্য ও সার আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৩২৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়া ওষুধের কাঁচামালের এলসি খোলা হয়েছে ৭০ কোটি ৫১ লাখ ডলারের; বেড়েছে ১৮ শতাংশ।

মূলধনি যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির জন্য ৩৯০ কোটি ২৮ লাখ ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা। বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৪৫৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৮ শতাংশ।

জুলাই-জানুয়ারি সময়ে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ৩৯৭ কোটি ৬ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ ৮৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মধ্যে চাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৩২ কোটি ১৭ লাখ ডলারের; কমেছে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। গম আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১৩৩ কোটি ২৫ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি ৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

এ ছাড়া অন্যান্য পণ্য ও শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ৩৯৮ কোটি ডলারের; বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

চিনি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের। প্রবৃদ্ধি ১১২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ভোজ্যতেল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১১১ কোটি ৯৩ লাখ ডলারের; বেড়েছে ৭২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

সাত মাসের এলসি খোলার এই তথ্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশ ভালোই চলছিল; করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। রাজস্ব আদায়েও গতি এসেছে। রেমিট্যান্স ছাড়া অর্থনীতির প্রায় সূচকই এখন ইতিবাচক। পণ্য আমদানি যেটা বাড়ছে তার প্রভাব বিনিয়োগে পড়বে। অর্থনীতি চাঙা হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে।

‘সে কারণে এই সময়ে পণ্য আমদানি বাড়াটাকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি,’ বলেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বেশ কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ পুরোদমে চলছে। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম আমদানির জন্যও এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে। এটা খুবই ভালো লক্ষণ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমাদের বিনিয়োগে যে স্থবিরতা ছিল, সেটা কেটে যাবে।’

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘রপ্তানি বাড়ছে। তাতে আমরা খুশি। আর এই রপ্তানির কাঁচামাল এবং শিল্প স্থাপনের জন্য মূল্যধনি যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি বাড়বে- এটাই স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, ‘করোনার ধাক্কা সামাল দিয়ে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে একটু ভয় আছে। তা না হলে সবকিছু ভালোই চলছে।’

২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মোট ৫৬ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল, যা ছিল আগের (২০১৮-১৯) অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ কম।

রিজার্ভে টান

আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি রিজার্ভ বা সঞ্চয়নও কমছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

কিন্তু আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ২ বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে। অথচ গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল, যা ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়।

দুই মাস পর পর আকুর দেনা পরিশোধ করে বাংলাদেশ।

এ বিভাগের আরো খবর