পণ্যমূল্য বৃদ্ধির হার বা মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যানের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দাবি করে গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং বা সানেম যে তথ্য দিয়েছে, সেটি মানছেন না অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেছেন, সানেম কীভাবে এই পরিসংখ্যান বের করেছে, সেটি তাদের জানা নেই। সরকারি সংস্থা বিবিএস যে পরিসংখ্যান দেয়, সেটিই সঠিক। এই পরিসংখ্যান আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও ব্যবহার করে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
একই দিন সানেমের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখন ১২ শতাংশের বেশি। তবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি এখন ৬ শতাংশের কম।
বিবিএস যে দাবি করেছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন অর্থনীতিবিদরা। এবার দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজার নিয়ে গবেষণা করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলো, তাতেও বিবিএসের পরিসংখ্যান প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
তবে সানেমের হিসাব গ্রহণ করতে রাজি নন অর্থমন্ত্রী। বলেছেন, এই হিসাব সঠিক নয়।
তিনি বলেন, ‘সানেম কোন পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতির হিসাব করেছে আমার জানা নেই। তবে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ সব দাতা সংস্থাই সরকারি সংস্থা পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব গ্রহণ করে। আমরা সঠিকভাবে হিসাব করছি এবং আমাদের দেয়া তথ্যই সঠিক।’
তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা কি নিয়ম-নীতির বাহিরে হিসাব করি?’
মন্ত্রীর মতে, মূল্যস্ফীতি প্রতিনিয়ত হিসাব করার বিষয় নয়। প্রতি সপ্তাহেও এটি পরিবর্তন হয় না। এটা তিন মাসে বা ষান্মাসিক ভিত্তিতে করা হয়।
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক বিশ্বাস করে। আমাদের দেশে কেউ যদি বিশ্বাস না করে তাহলে এটা তাদের ব্যাপার। সানেমের তথ্য তো আমরা ব্যবহার করতে পারি না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কারও বিরুদ্ধে বলব না। কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। শুধু জানতে চাই, কোন তথ্যের ভিত্তিতে সানেম হিসাব করেছে। উনারা কি ভারতের ডাটা ব্যবহার করেছে কিংবা রাশিয়া, ফ্রান্সের ডাটা ব্যবহার করেছে?’
‘যুদ্ধ অচিরেই থেমে যাবে’
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যে যুদ্ধ হচ্ছে, সেটি দীর্ঘায়িত হবে না, এমন বিশ্বাস রয়েছে অর্থমন্ত্রীর মধ্যে।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ থেমে যাবে। আমরা চাই বিশ্বের শান্তি ফিরে আসুক। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘কী কারণে তেলের দাম বাড়ছে আমরা সবাই জানি। তবে দাম বাড়লেও তা যেন ভোক্তার উপর চাপ না পড়ে সেদিকে আমাদের খেয়াল আছে। এ জন্য আমরা ভাগাভাগি করে নেই। কিছু চাপ সরকার বহন করে। কিছু ব্যক্তি বহন করে। ভর্তুকি দিয়ে এই চাপ প্রশমন করা হয়।’
পশ্চিমা অবরোধ রাশিয়া থেকে সার আমদানিতে ফেলবে কি না- মন্ত্রীর কাছে এমন প্রশ্ন ছিল সাংবাদিকদের।
জবাবে তিনি বলেন, ‘যে পণ্যটি আনা হচ্ছে সেটি নতুন নয়। অনেকবার নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা এবারও চেষ্টা করছি সার আনার জন্য। রাশিয়া যদি না দেয় তাহলে আমরা বিকল্প হিসেবে অন্য দেশ থেকে আনার চেষ্টা করব।
‘তবে আমি আশা করছি, চলমান যুদ্ধ সার আমদানিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।’