বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হেডফোনে শিশুদের শ্রবণক্ষীণতায় উদ্বেগ

  •    
  • ৩ মার্চ, ২০২২ ১১:৩৪

হেডফোনের ব্যবহার শিশুদের শ্রবণক্ষীণতা বাড়ার একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ডিভাইসটির অতি ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।  

আট বছরের স্কুলছাত্রী তানিশা। চোখে সমস্যা থাকায় তাকে ল্যাপটপ, মোবাইলের মতো ডিভাইস বেশি সময় ব্যবহার না করতে বলেছিলেন চিকিৎসক, তবে করোনাভাইরাস মহামারিতে চিকিৎসকের সে পরামর্শ মানতে পারেনি শিশুটি।

করোনায় তানিশার মতো খুদে শিক্ষার্থীদের দিনে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা অনলাইনে ক্লাসসহ স্কুল কার্যক্রমে অংশ নিতে হয়েছে। হোমওয়ার্ক ও অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে জমা দিতে হয়েছে অনলাইনেই। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে হেডফোন ব্যবহার করতে হয়েছে তাদের।

হেডফোনের এ ব্যবহার শিশুদের শ্রবণক্ষীণতা বাড়ার একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ডিভাইসটির অতি ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।

গত বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটে যায় তানিশা। ওই সময় তার অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।

তিনি বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস করার সময় কানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিক্ষকের কথা মনোযোগ সহকারে শুনতে হেডফোন ব্যবহার করার কারণে কানে সমস্যা বেড়েছে। কখনো কখনো মাথাব্যথা করে, চোখব্যথা করে।’

শুধু তানিশা নয়, দীর্ঘ সময় ধরে ক্লাসের কারণে হাজারো শিক্ষার্থীর এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা জানান, করোনা মাহামারি কারণে প্রায় দুই বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ সময়ে শিশুদের জীবন বদলে গেছে। বিশেষ করে অনলাইন পাঠদানের কারণে দীর্ঘসময় তাদের হেডফোনের ব্যবহার বেড়েছে।

নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন মানুষ ঘরবন্দি ছিল। অনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাসের কারণে ব্যাপকভাবে কানের ওপর প্রভাবে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা অতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহারের কারণে ক্লাসে অমনোযোগীও ছিলেন। ভারতের একটি গবেষণায় আরও উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।

‘গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহারের কারণে ভারতে ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনলাইনে ক্লাসে মনোযোগ ছিল না। এসব শিক্ষার্থীর ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তাদের মাথাব্যথা, চোখব্যথা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে আরও বেশি দৃশ্যমান হবে আরও কয়েক বছর পর। কারণ কানের সমস্যা মানুষ সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করতে পারেন না। যখন গুরুতর হয়, তখন হাসপাতালে আসেন।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৩০টি কঠিন রোগের কারণ ১২ ধরনের দূষণ। এর মধ্যে শব্দদূষণ অন্যতম।

শব্দদূষণের কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি হৃৎস্পন্দনে পরিবর্তন, হৃৎপিণ্ডে ও মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে যেতে পারে। শ্বাসকষ্ট, মাথাঘোরা, বমি বমি ভাব, দিক ভুলে যাওয়া, দেহের নিয়ন্ত্রণ হারানো, মানসিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা তৈরি করে এ দূষণ।

ডা. মনিলাল আইচ বলেন, ‘দেশে গড়ে ৩৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে কানের সমস্যায় রয়েছে। প্রতি তিনজনে একজন গড়ে কানে কম শোনে। এ ছাড়া যেসব কারণে শব্দদূষণ হচ্ছে, এটা কমাতে যেসব নীতিমালা করা হয়েছে, তার একটাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না, যার কারণে শব্দদূষণ বাড়ছে।’

২০১৭ সালের একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে শব্দদূষণের দেশ হচ্ছে ঢাকা। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের কানের সমস্যা দেখা দেবে।’

জাতীয় নাক, কান ও গলা ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মানস রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘দেশে শ্রবণক্ষীণতার প্রধান কারণ শব্দদূষণ। শব্দের একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রা রয়েছে। সাধারণত মানুষের ৮০ ডেসিবল শব্দ গ্রহণের সক্ষমতা রয়েছে।

‘এর চেয়ে বেশি পরিমাণ শব্দের মধ্যে মানুষ নিয়মিত কাজ করলে, কানে সমস্যা দেখা দেয়, কিন্তু রাজধানীসহ সারা দেশেই নগরায়নের প্রভাবে সবখানেই মাত্রাতিরিক্ত শব্দ সৃষ্টি হচ্ছে।’

তিনি বলেন, দেশে অনেক মানুষ জন্মগত ও কানপাকা রোগের কারণে কানে কম শোনে। এ ছাড়া দেশে প্রতি বছর প্রায় আড়াই হাজার শিশু জন্মগতভাবে শ্রবণ সমস্যা নিয়ে বেড়ে উঠছে, কিন্তু জাতীয়ভাবে এ সমস্যা শনাক্তে তেমন ব্যবস্থা না থাকায় অনেক পরে এটি প্রকাশ পাচ্ছে।

এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জাতীয়ভাবে জন্মের পরপর শিশুর শ্রবণ শনাক্তের ব্যবস্থা থাকলে এ সমস্যা অনেক কমে আসত। এ ছাড়া দেশে তরুণ সমাজের মধ্যে যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, বিশেষ করে কানে অনিয়ন্ত্রিত ইয়ার প্লাগ ব্যবহার বাড়ছে, তাতে করে ধীরে ধীরে শ্রবণক্ষীণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করেছে। সেখানে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে, কিন্তু তার সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের।

বিশ্ব শ্রবণ দিবস-২০২২ উপলক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জীবনভর ভালো শ্রবণশক্তি বজায় রাখার উপায় হিসেবে নিরাপদ শ্রবণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

এর আগে ২০২১ সালে ডব্লিউএইচও শ্রবণ সংক্রান্ত বিশ্ব প্রতিবেদন চালু করে, যেখানে শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে থাকা মানুষের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাকে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি উচ্চ শব্দ কমানোর ওপর গুরুত্বরোপ করা হয়।

ডব্লিউএইচও বলছে, কানের যত্নের মাধ্যমে সারা জীবন ভালো শ্রবণশক্তি পাওয়া সম্ভব; শ্রবণশক্তি কমার অনেক সাধারণ কারণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

শব্দদূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সারা বিশ্বের মতো বৃহস্পতিবার দেশে পালন হচ্ছে বিশ্ব শ্রবণ দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপ্রাদ্য ‘টু হিয়ার ফর লাইফ, লিসেন উইথ কেয়ার!’ এর মানে দাঁড়ায়, ‘জীবনভর শুনুন, যত্নের সঙ্গে শুনুন’।

এ বিভাগের আরো খবর