বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মোর পোলাডার লাশটা আইন্না দ্যান’

  •    
  • ৩ মার্চ, ২০২২ ১০:৪৯

মা আমেনা বেগম বিলাপ করে বলছেন, ‘বাজানে মোরে কইছে, এইবার বাড়িতে আইয়া ঘর উডাইবে। আর আমাগো ভাঙা ঘরে থাহন লাগবে না। ঘরহান উডান অইলে বিয়া কইরা বউ ঘরে আনবে। মোর পোলাডার লাশটা আইন্না দ্যান। মোর পোলাডারে মুই এক নজর দেকমু, আর কিচ্ছু চাই না।’

ইউক্রেনের বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলায় নিহত মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের স্বজনদের এখন একটাই চাওয়া, আরিফের মরদেহ বাড়ি আনা। তবে মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

২৯ বছর বয়সী আরিফের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা বাজারে। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।

ছোট ভাই তারিকুল ইসলাম তারেক নিউজবাংলাকে জানান, চট্টগ্রাম মেরিন অ্যাকাডেমি থেকে পড়াশোনা শেষ করে ২০১৮ সালে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দেন আরিফ। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

রকেট হামলায় নিহত মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফ। ছবি: সংগৃহীত

তারেক বলেন, ‘বুধবার সকালে ভাইয়ার সঙ্গে আমাদের সব শেষ কথা হয়েছে। ভাইয়া সবার কাছে দোয়া চেয়েছিল যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে। পাঁচ দিন আগে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে আটকে পড়ার কথা জানিয়েছিল। তখন থেকে আমরা ভয়ে ছিলাম, শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্যি হলো।

‘এখন তো আরও দুশ্চিন্তায় আছি। মরদেহ কীভাবে দেশে আনব? জেলা প্রশাসকের কাছে যাব মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে সহযোগিতা চাইতে।’

গত ২১ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ নামের জাহাজটি তুর্কি বন্দর এরেগলি ছেড়ে যায়। দুই দিন পর ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বন্দর অলিভিয়ায় পৌঁছায়। রাশিয়ার সামরিক অভিযানে ইউক্রেনের পরিস্থিতির অবনতি হলে শিপিং করপোরেশনের নির্দেশে পণ্য লোড করার পরিকল্পনা বাতিল করে সেখানেই জাহাজটিকে অবস্থান করতে বলা হয়।

বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে যুদ্ধবিমান থেকে রকেট হামলায় বাল্কটির ডেকে আগুন ধরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন জাহাজের ক্রু ও নাবিকরা।

জাহাজের নাবিক আতিকুর রহমান মুন্না নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন, এ ঘটনায় আরিফ নিহত হয়েছেন। বাকিরা অক্ষত আছেন।

বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমির মাধ্যমে ছেলের মৃত্যুর খবর পান আরিফের বাবা-মা।

বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আবদুর রাজ্জাক তেমন কোনো কথা বলছেন না। মা আমেনা বেগম বিলাপ করে বলছেন, ‘বাজানে মোরে কইছে, এইবার বাড়িতে আইয়া ঘর উডাইবে। আর আমাগো ভাঙা ঘরে থাহন লাগবে না। ঘরহান উডান অইলে বিয়া কইরা বউ ঘরে আনবে। মোর পোলাডার লাশটা আইন্না দ্যান। মোর পোলাডারে মুই এক নজর দেকমু, আর কিচ্ছু চাই না।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আরিফের মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ইউক্রেনে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে। তাই আপাতত মরদেহ আনার বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।’

একই কথা জানান বরগুনা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

এ বিভাগের আরো খবর