ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্রলীগ না করায়’ এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার বিচার না হলে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল ভাস্কর্যের সামনে বুধবার সন্ধ্যায় মৌন মোমবাতি প্রজ্বালন করে এ হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনরত শতাধিক শিক্ষার্থী।
এ সময় তারা বলেন, ‘অভিযুক্তরা ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য ঘুরাফেরা করছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বসে বসে তামাশা দেখছে।
‘অভিযুক্তদের অনুসারীরা আন্দোলনে আসা শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। দ্রুত দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরণ অনশন চলবে।’
ছাত্রলীগ না করায় গত রোববার রাতে ওয়ালিদ নিহাদ নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগকর্মীদের বিরুদ্ধে। আহত নিহাদ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
নিহাদ জানান, রোববার রাত দেড়টার দিকে তাকে ডেকে নেয়া হয় বঙ্গবন্ধু হলের একাত্তর ব্লকের ৩২৪ নম্বর কক্ষে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পলাশ তাকে ডেকে নেন। রুমটিতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাকে থাপ্পড় মারেন নাট্যকলা বিভাগের হিমেল। এরপর তুহিন, মুমিন, অ্যালেক্স সাব্বির, তানভীরসহ অন্তত ১০ জন তাকে লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন। বুকের ওপর দাঁড়িয়ে মেরেছেন ফোকলোর বিভাগের আবু নাঈম আব্দুল্লাহ। রাত আড়াইটার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
তিনি নিউজবাংলাকে আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ না করার কারণে আমাকে ডাকা হয়। পারিবারিক সমস্যার কারণে আমার রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমি পড়াশোনা নিয়েই থাকতে চাই। কিন্তু আমাকে ক্যাম্পাসে থাকতে হলে ছাত্রলীগ করতে হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো শিক্ষকের কাছে বিচার চাইতেও নিষেধ করা হয়।
‘বেশি কথা বললে ক্যাম্পাসে থাকতে পারব না, বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো মরতে হবে- এমন হুমকি দেয়া হয়েছে।’
নিহাদ দাবি করেন, নির্যাতনের একপর্যায়ে তার বুকে রামদা ধরা হয়। তাকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে খালেদা জিয়ার ছবি আপলোড করানো হয়। তখন একটি ভিডিও ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে জোরপূর্বক তাকে দিয়ে বলানো হয়, ‘২০২৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, তারেক জিয়া দেশে ফিরবে। তখন ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্রলীগের কুত্তা থাকবে না।’
নির্যাতনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধানের কাছে।
এ ঘটনায় চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা।
শিক্ষার্থী নির্যাতনের এ ঘটনায় পরদিন দুপুর থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলে। এ সময় প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন।
মঙ্গলবার বিকেলেও শতাধিক শিক্ষার্থী প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারসহ সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।