বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আশ্রয়ণ প্রকল্পে দখলদার চক্রের থাবা

  •    
  • ৩ মার্চ, ২০২২ ১০:১৩

দখলদারদের অন্যতম আসুতোষ সরকার প্রকল্প এলাকায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ জায়গা নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বলে দাবি করছেন। এরই মধ্যে তিনি ওই জায়গায় পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। সেই সঙ্গে গাছের চারা রোপণ ও বেড়া দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আসুতোষ ছাড়াও প্রকল্পের জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তি।

সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে দখলদার চক্র। তাদের নানামুখী বাধার মুখে পিছিয়ে যাচ্ছে প্রকল্পের বাস্তবায়ন। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জায়গা দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বেড়া দিয়ে ঘিরে লাগানো হয়েছে গাছের চারা।

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের সেনখালি গ্রামে ৪ একর ৫ শতাংশ জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় ওই জায়গা ভরাট করা হয়। এরপরই প্রকল্পের জমিতে চোখ পড়ে দখলদার চক্রের।

দখলদারদের অন্যতম আসুতোষ সরকার প্রকল্প এলাকায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ জায়গা নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বলে দাবি করছেন। এরই মধ্যে তিনি ওই জায়গায় পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। সেই সঙ্গে গাছের চারা রোপণ ও বেড়া দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আসুতোষ ছাড়াও প্রকল্পের জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তি।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি জায়গা দখল করতে ওই চক্র শুরু থেকেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছে। ফলে এক বছরেও প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, সরকারি জায়গা দখলের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের সেনখালি গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য সরকারিভাবে মাটি ভরাট করা হয়েছে। এর একটি অংশ দখল করে ঘর নির্মাণ করছেন মালয়েশিয়াপ্রবাসী আসুতোষ সরকার।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক দিন আগে ওই ঘরের কিছু অংশ ভেঙে দেয়া হয়। কিন্তু তাতে ক্ষান্ত হননি তিনি। প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে আবারও ঘর নির্মাণ করেছেন। অনেকে আবার বাঁশ ও গাছের ডাল দিয়ে বেড়া দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু জায়গা ঘিরে রেখেছেন। সেসব জায়গায় রোপণ করা হয়েছে গাছের চারা।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের সিরাজকাঠি মৌজায় সেনখালি গ্রামে ৪ একর ৫ শতাংশ সরকারি জমিতে ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে সেনখালি গ্রামে প্রকল্পের জায়গা থেকে গাছ সরিয়ে নিতে দখলদারদের নির্দেশ দেয় প্রশাসন।

প্রশাসনের চাপে দখলদাররা একপর্যায়ে কিছু অংশের গাছ কেটে নেয়। এরপর ৮০ শতাংশ জমি মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। সঙ্গে পুরোনো খালটিও খনন করা হয়। বাকি অংশে পাকা রাস্তা করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। কিন্তু প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণকাজ শুরুর আগ মুহূর্তে পরিকল্পিতভাবে বিক্ষোভ শুরু করে দখলদাররা।

দখলদার বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুরোনো খাল সচল না থাকলে হাজার হাজার একর ফসলি জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হবে। অথচ দীর্ঘ ৪৮ বছর আগেই বনের বাড়ি-সেনখালি খালটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। অন্য স্থানে নতুন খালও খনন করা হয়।

একাধিকবার প্রকল্পের কাজে বাধা দেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি সুবোধ সরকারের ছেলে সুভাস সরকার ও নিতিশ সরকার এবং বিচরণ বাড়ৈ। শুধু তা-ই নয়, ঘর নির্মাণের জন্য আনা প্রায় ১০ হাজার ইট রাতের আঁধারে সরিয়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় গত বছরের ২৫ জুন আমগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান টিপু এবং নিতিশ সরকার ও বিচরণ বাড়ৈর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এর জের ধরে নিতিষ সরকার ও বিচরণ বাড়ৈর লোকজন ইউনিয়ন পরিষদে হামলা চালায়। ওই ঘটনার পর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখা হয়।

এদিকে প্রকল্পের ঘর নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় মাটি ভরাট করা জায়গায় অবৈধভাবে ইটের পাকা ঘর নির্মাণের চেষ্টা চালান আসুতোষ সরকার। খবর পেয়ে নির্মাণাধীন দেয়াল ভেঙে দেয় প্রশাসন। তবে পাশেই আবারও নির্মাণ করা হচ্ছে একটি পাকা ঘর।

আসুতোষ সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে গাছ লাগানো ছিল। এইটা আমার পৈতৃক সম্পত্তি। আমার জায়গায় ঘর উঠাইছি। কিন্তু প্রশাসন ভেঙে দিয়েছে। এখানে জোর করে প্রশাসন আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ করতে চায়। আমরা জীবন থাকতে এখানে ঘর নির্মাণ করতে দেব না।’

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা জগবন্ধু বালা বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প হলে অনেক গরিব মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে। বিদ্যুৎ, পাকা সড়ক, কর্মসংস্থান, বিশুদ্ধ পানিসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাওয়া যাবে। কিন্তু কয়েক ব্যক্তি সরকারি জায়গা দখল করার জন্য এই প্রকল্প চাচ্ছে না। তাদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভাবনার কারণে প্রকল্পের ঘর নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

আমগ্রাম ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি কুচক্রী মহল স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে আন্দোলন করে। পরে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ স্থগিত রাখে। তারা এখন সেই সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলের পাঁয়তারা করছে। নিজেরা গাছ লাগিয়ে বেড়াও দিচ্ছে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘ওটা সরকারি সম্পত্তি। মানুষ চাইলে ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু দখল করার চেষ্টা করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুনেছি, ইতোমধ্যে কেউ কেউ প্রকল্পের জায়গা দখল করে ঘর নির্মাণের চেষ্টা করছে। আমরা দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর