বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেই কোনো কৃষক-মজদুর

  •    
  • ৩ মার্চ, ২০২২ ০৮:৪৪

সিপিবির এবারের কংগ্রেসে নির্বাচিত ৪৩ সদস্যের মধ্যে ৩৫ জন সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা-কর্মী। বাকিদের মধ্যে কয়েকজন অতীতে সরাসরি ছাত্র ইউনিয়ন না করলেও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের কেউ কখনও কৃষি বা অন্য কোনো শ্রম খাতের শ্রমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) দ্বাদশ কংগ্রেসের আমন্ত্রণপত্রে শুরুতেই ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ স্লোগান ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই কংগ্রেসে গঠিত পার্টির ৪৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে শ্রমজীবীদের সরাসরি কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।

খোদ সিপিবি সদস্যদের একটি অংশই তুলছেন এই অভিযোগ। তারা বলছেন, কৃষক-শ্রমিক-মজুর-মেহনতি মানুষের দল হিসেবে পরিচিত সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার এসব শ্রেণি-পেশার সঙ্গে সরাসরি জড়িত কেউ জায়গা পাননি। আগের কমিটিতে তাদের কিছুটা প্রতিনিধিত্ব থাকলেও এবার এ ধরনের কেউ নেই।

সিপিবির পল্টন থানার সদস্য ও সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ফারহান হাবীব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যে শ্রমিক, কৃষকের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব তুলে আনার কথা বলছি, সেটা কতটুকু পারছি। আমাদের এই যে ৪৩ জন নেতা, তারা সবাই যোগ্য এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে রাজনীতি করছেন। তবে আমার বক্তব্য হচ্ছে, পার্টিতে এই ৪৩ জনের মধ্যে অন্তত অর্ধেকের বেশি শ্রমিক-কৃষক-ক্ষেত্রমজুরদের মধ্য থেকে উঠে আসা উচিত, এটা যে হয়নি সেটা আমাদের সার্বিক ব্যর্থতা।

ফারহান বলেন, ‘আমি একজন কর্মী হিসেবে মনে করি, এটা আমাদের নেতৃত্ব তৈরি না করতে পারার ব্যর্থতা। আমরা যারা শিক্ষিত আছি, সমাজের একটু সুবিধাভোগী অংশ তারা ঘুরেফিরে নেতৃত্বে আসছি।’

২০১৮ সালে প্রকাশিত বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধানের পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণের তৃতীয় পুনর্মুদ্রণে ‘মজদুর’ শব্দের অর্থ বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি দৈহিক পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করেন, শ্রমজীবী।‘

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিপিবির সাবেক এক নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকজন কৃষক-শ্রমিক প্রতিনিধি এবার নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় থাকলে কংগ্রেসে তাদের কেউ প্রয়োজনীয় সমর্থন পাননি। গত কংগ্রেসে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাঝ থেকে উঠে আসা সাদেকুর রহমান শামীম। তবে এবার তিনি ভোটে হেরে গেছেন।

‘এ ছাড়া বাওয়ানী জুট মিলের সাবেক শ্রমিক ও শ্রমিক নেতা আব্দুল কাদের গত কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হলেও এবার হেরে গেছেন।’

এবারের কংগ্রেসে নির্বাচিত ৪৩ সদস্যের মধ্যে ৩৫ জন সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা-কর্মী বলে নিশ্চিত করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় এক সদস্য। বাকিদের মধ্যে কয়েকজন অতীতে সরাসরি ছাত্র ইউনিয়ন না করলেও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের কেউ কখনও কৃষি বা অন্য কোনো শ্রম খাতের শ্রমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না।

কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েক নেতা অবশ্য দাবি করছেন, নতুন নেতৃত্বের সবাই নিজেদের অতীতের শ্রেণি থেকে চ্যুতি ঘটিয়ে এখন শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাদের সবার আন্দোলন এখন কৃষক-শ্রমিকের মুক্তির জন্য। ফলে সরাসরি শ্রমে জড়িত না থাকার প্রভাব পার্টিতে পড়বে না।

এখানে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা শ্রমিক আন্দোলন করেন, কৃষক আন্দোলন করেন, বিভিন্ন আন্দোলনে পরীক্ষিত কমরেড। তারাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হয়েছেন বলে দেখতে পাচ্ছি।

সাবেক ছাত্রনেতা ও সিপিবির নতুন কেন্দ্রীয় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মনে রাখতে হবে কমিউনিস্ট পার্টি যারা করতে এসেছেন এবং যারা এবার প্রতিনিধি হয়ে এসেছেন; তারা সবাই নিজের শ্রেণির বাইরে এসে শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তি হিসেবেই এসেছেন। এ কারণেই আমরা সবাই কমিউনিস্ট পার্টি করতে পারছি। এখানে যারা এসেছেন তারা নিজের শ্রেণিচ্যুত হয়ে এই ধরনের পার্টি অর্গানের মধ্যে যুক্ত আছেন। তাই আলাদাভাবে এ ধরনের কোনো কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’

তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস হচ্ছে আমাদের সর্বোচ্চ সংস্থা। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কারা দায়িত্ব পালন করবেন সেটা কংগ্রেসই নির্ধারণ করে।

‘এখানে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা শ্রমিক আন্দোলন করেন, কৃষক আন্দোলন করেন, বিভিন্ন আন্দোলনে পরীক্ষিত কমরেড। তারাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হয়েছেন বলে দেখতে পাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে সর্বোচ্চ সংস্থা যে রায় দেবে, সেটাকে শিরোধার্য করে এগোতে হবে।’

একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, একটা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরা পেশাগত শ্রমিক না হলেও কিন্তু চেতনাগত জায়গা থেকে তিনি শ্রমিকের জন্য সংগ্রাম করছেন, কৃষকের জন্য আন্দোলন করছেন। আমাদের মূল জায়গাটা হলো শ্রমিক শ্রেণির পক্ষে আমাদের রাজনৈতিক চেতনার জায়গাটা।

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য লুনা নূর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পার্টিগতভাবে এবং যারা ছাত্র ইউনিয়ন করতাম তারাও মনে করি, আমরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণসংগঠনের মধ্যে কাজ করি। সেই গণসংগঠনের শ্রেণি-পেশার মানুষকে অগ্রসর করে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে পার্টিকে আমরা সমৃদ্ধ করি।

‘এই কমিটিতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা অনেকেই ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন। এটা নিয়ে কোনো দ্বিধার জায়গা নেই। তবে ছাত্র ইউনিয়নও সমাজতান্ত্রিক সমাজের জন্য লড়াই করে। সুতরাং যারা একসময়ে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, তারা রাজনৈতিক চেতনার জায়গা থেকে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এবং সেই ধারায় আমরাও এসেছি। এরাই কিন্তু আবার বিভিন্ন গণসংগঠনের হয়ে কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, একটা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরা পেশাগত শ্রমিক না হলেও কিন্তু চেতনাগত জায়গা থেকে তিনি শ্রমিকের জন্য সংগ্রাম করছেন, কৃষকের জন্য আন্দোলন করেছেন। আমাদের মূল জায়গাটা হলো শ্রমিক শ্রেণির পক্ষে আমাদের রাজনৈতিক চেতনার জায়গাটা।’

লুনা নূর বলেন, ‘তবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জায়গায় সব শ্রেণি-পেশা ও লিঙ্গের প্রতিনিধিত্ব থাকা দরকার। সেটা যে একদম নেই, তা কিন্তু নয়। আমাদেরই কেউ গার্মেন্টসে, কেউ কৃষকের মাঝে, কেউ নারীদের নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের কংগ্রেসে প্রতিনিধিরা কিন্তু এটা দেখে ভোট দেন না যে, উনি ছাত্র ইউনিয়ন থেকে এসেছেন। কংগ্রেসে কিন্তু প্রায় সব শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি থাকেন।’

সিপিবির দ্বাদশ কংগ্রেস শেষ হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। দলের বিধান অনুসারে, নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় পার্টির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে নির্বাচন করা হবে। ৪ মার্চ নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সভা বসবে।

এ বিভাগের আরো খবর