নিজেকে সিআইডি ইন্সপেক্টর পরিচয় দিয়ে এক নারীকে মামলা তদন্তে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন কামরুল। পরে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হাতিয়ে নিয়ে তিনি পাতেন প্রতারণার ফাঁদ। অনলাইনে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে নারীকে প্রস্তাব দেন শয্যাসঙ্গী হতে। দুই লাখ টাকাও দাবি করেন ডকুমেন্ট ফেরত পেতে।
সেই প্রতারক কামরুল ইসলামকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) সাইবার ইন্টেলিজেন্স বিভাগ। প্রতারণার তথ্য যাচাইয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ জানান, কামরুলকে সোমবার কুমিল্লার কোতোয়ালী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির সাইবার টিম। তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধের তথ্য মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদে সেগুলো যাচাই হচ্ছে।
সিআইডি জানায়, কামরুল বেশিরভাগ প্রতারণা করেছেন পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয়ে। সামরিক গোয়েন্দা হিসেবেও দাবি করেছেন অনেকের কাছে। তার প্রতারণার প্রধান টার্গেট ছিলেন বিপদগ্রস্ত নারী।
গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে পাওয়া গেছে প্রতারণায় ব্যবহার করা জাল সিল, বিভিন্ন দপ্তরের চিঠিসহ নানা ডকুমেন্ট। অনলাইন প্রতারণায় ব্যবহার করা তার পাঁচটি ফেসবুক আইডি শনাক্ত হয়েছে। জব্দ হয়েছে তার মোবাইল ফোন।
কামরুলের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা হয়েছে। সে মামলায় তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এজাহারে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার এক নারীর বিষয়ে সংবাদ প্রচার হয় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে। তখন কামরুল সহযোগিতার কথা বলে রিপোর্টারের মাধ্যমে ঐ নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
নিজেকে সিআইডি ইন্সপেক্টর মেহেদী পরিচয় দিয়ে তিনি সখ্যতা গড়ে তোলেন ওই নারীর সঙ্গে। সাইবার এক্সপার্ট হিসেবে তিনি নারীর কাছে থেকে নেন মামলার ডকুমেন্ট।
নারী নির্যাতন মামলার আসামিদের শায়েস্তা করতে মাদকের একটি মামলা দিতে হবে বলেও তিনি জানান। এ জন্য হোয়াটসআ্যাপে মামলার ড্রাফট পাঠিয়ে নারীর কাছে থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেন। এ সময় এসপি পরিচয়ে আরেকজনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন ওই নারীকে।
বিশ্বাস অর্জনের পর মামলার প্রয়োজনের কথা বলে কামরুল ঐ নারীর ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও নেন। এসব ডকুমেন্ট হাতিয়ে নিয়েই কামরুল আচরণ বদলে ফেলেন। নারীর কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন ও শয্যাসঙ্গী হওয়ার প্রস্তাব দেন। তা না পেলে ছবি ও ভিডিও বিকৃত করে তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন।
এ পরিস্থিতিতে পরিচয় যাচাইয়ে নারী উপস্থিত হন মালিবাগ সিআইডি হেডকোয়ার্টার্সের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে। সেখানে ইন্সপেক্টর মেহেদী নামে কাউকে তিনি খুঁজে পাননি। তখন তিনি সিআইডি অফিসে কান্নাকাটি শুরু করলে উপস্থিত কর্মকর্তারা ঘটনা জানতে চান।
সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার এ ঘটনা যাচাইয়ে মাঠে নামে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। কিছু তথ্য-প্রমাণ নিয়ে শুরু হয় অনুসন্ধান। অবশেষে ‘ইন্সপেক্টর মেহেদী’ পরিচয় দেয়া কামরুলের অবস্থান কুমিল্লায় শনাক্তের পর সেখানে অভিযান চলে। সোমবার গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।