বিএনপিকে নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চান না গত জাতীয় নির্বাচনের পর অকার্যকর হয়ে পড়া জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে দলটির শরিক গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, সত্য হজমের শক্তি সবার নেই।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডি আয়োজিত এক আলোচনায় এ কথা বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ২ মার্চ ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।
আলোচনায় আমন্ত্রণ পেয়েও এলেন না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে অসুস্থতা।
তবে ঐক্যফ্রন্টের আরেক শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার ধারণা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী সেই আলোচনায় অংশ নেয়ায় বিএনপি নেতা তাতে যাননি। তিনি বলেন, ‘আজকে মির্জা ফখরুল ভাইয়ের এখানে থাকার কথা ছিল। আমার অবশ্য তখনই ডাউট হলো, তখনই যখন কার্ডের মধ্যে জাফরুল্লাহ ভাইয়ের নাম লেখা, আবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম লেখা। এই দুজন একসঙ্গে যাবে নাকি? বহুদিন ধরে দেখছি যায় না।’
মান্না যখন এই বক্তব্য রাখছিলেন, তখন জাফরুল্লাহ চৌধুরী হাসছিলেন। তবে তিনি তার বক্তব্যে ফখরুলের অনুপস্থিতি বা তাকে নিয়ে বিএনপি নেতার মন্তব্য বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
বিএনপি নিয়ে আর কথা বলতে না চান না বলেও জানান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। বলেন, ‘আমি বিএনপির কথা বলতে চাই না। অনেকে মনঃক্ষুণ্ন হয়। সত্য কথা হজম করার শক্তি খুব বেশি লোকের নেই।’
মান্নার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ভুল করলে আমি ভুল করেছি। তার জন্য আপনাদের দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই।’
চীনপন্থি বাম বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত এক দশকে বিএনপির বেশ কাছাকাছি এসেছিলেন। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নানা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে পত্রিকায় খোলা চিঠিও লিখেছেন তিনি। ২০১৫ সালে দলটির সরকার পতন আন্দোলন অকার্যকর হয়ে পড়ার পর যখন তারা কর্মসূচি থেকে বের হয়ে আসতে পারছিল না, তখন তাদের ঢাকা সিটি করপোরশন নির্বাচনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল।
এরপর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির আরেক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনেও জাফরুল্লাহ রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
তবে গত বছর বিএনপি সমর্থক একটি সংগঠনের আলোচনায় তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে বিএনপির বিরাগভাজন হন জাফরুল্লাহ। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে দুই পক্ষ আবার অনেকটাই বিরোধী অবস্থানে উপনীত হয়েছে।
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে খাঁটি মানুষ আখ্যা দিয়ে তাকে মেনে নিতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান।
তবে মির্জা ফখরুল ময়মনসিংহে এক জনসভায় বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বিএনপির হয়ে কোনো মত দেয়ার অধিকার রাখেন না।
দলটির স্থায়ী কমিটির নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিউজবাংলাকে বলেছেন, জাফরুল্লাহর কথায় বিএনপি ট্রাকের নিচে মাথা দেবে না।
জাফরুল্লাহ আক্ষেপ করে বলেন, তার পরামর্শ মানলে সবার ভালো হতো। জেএসডির আলোচনায় তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্যসমূহ যদি আপনারা চিন্তা করে দেখেন, আমি এক বছর আগে থেকে দুই বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকারের কথা বলছি। জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনোক্রমেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা যাবে না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি নিয়েও কথা বলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। বলেন, ‘সিপিবি খুব ভালো কিছু করতে পারছে না। কিন্তু তাদের কংগ্রেস থেকে আমাদের সব রাজনৈতিক দলের শিক্ষা নেয়া উচিত। ৩০ বছর মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সিপিবিকে দেখাশোনা করেছেন। কিন্তু যখন গোপন ভোট হয়েছে, তখন উনি তিন নম্বরে গিয়ে হাজির হয়েছেন। ওনার আগেই দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের দেশে আন্দোলন গড়ে না ওঠার একটা কারণ এই সিপিবি।’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘খণ্ডিত ইতিহাস বাংলাদেশের জন্য সুখকর হবে না। এর মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ছোট করছি।’