ফেমাস গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান ১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ফাঁকি দিয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে বুধবার পৃথক মামলা হয়েছে।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফেমাস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান দুটি ৮০ কোটি টাকার বেশি বিক্রির হিসাব গোপন করেছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারের ১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে।
ফেমাস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- ফেমাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, টঙ্গী এবং ফেমাস আইবারকেম ফ্লেভারস অ্যান্ড ফ্র্যাগনেন্সেস লিমিটেড, গাজীপুর। প্রতিষ্ঠান দুটির করপোরেট অফিস রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরে।
প্রতিষ্ঠান দুটি মূলত খাদ্যসামগ্রীতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কের প্যাকেজিং সামগ্রী উৎপাদন ও সরবরাহ করে।
ফেমাস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান দুটি দীর্ঘদিন ধরে বিক্রির প্রকৃত তথ্য গোপন করে বিপুল অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে সম্প্রতি ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ আসে। এর ভিত্তিতে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সাজেদুল হক ও মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানের প্রধান করপোরেট অফিসে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে গোয়েন্দারা দেখতে পান প্রতিষ্ঠানটি মাসিক ভ্যাট রিটার্নে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, অভিযানে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে ও প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে ধারণকৃত তথ্যাদি যাচাই করে বিক্রিসংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি অবস্থায় আটক করা হয়। পরে এসব কাগজপত্র পরীক্ষা করে ব্যাপক অসামঞ্জস্য পাওয়া যায়।
তদন্তের তথ্য অনুসারে, ফেমাস প্রিন্টিং অ্যন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৮৬৯ কোটি ১০ লাখ ৮১ হাজার ৭২২ টাকার পণ্য বিক্রি করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় গাজীপুর ভ্যাট সার্কেলে মাসিক রিটার্নে ৮২৭ কোটি ৯০ লাখ ৭১ হাজার ২৪৫ টাকা বিক্রির হিসাব দেখায়। সে হিসাবে রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রির পার্থক্য পাওয়া যায় ৫৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
এভাবে বিক্রির তথ্য গোপন করে প্রায় ৭ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে।
যথাসময়ে ভ্যাট পরিশোধ না করায় এই ফাঁকির ওপর ২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত জরিমানা প্রযোজ্য। ফলে ভ্যাট আসে ২ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
এ ছাড়া ফেমাস আইবারকেম ফ্লেভারস অ্যান্ড ফ্র্যাগনেন্সেস লিমিটেড ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট টঙ্গী সার্কেলে মাসিক রিটার্নে ২০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বিক্রির হিসাব দাখিল করে। সে হিসাবে রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রির পার্থক্য পাওয়া যায় ২৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
বিক্রির প্রকৃত তথ্য গোপন করায় এ ক্ষেত্রে ৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে। এই ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসিক ২ শতাংশ হারে জরিমানা বাবদ ভ্যাট আসে ৪৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৬ টাকা।
তদন্তে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং সুদ বা জরিমানা বাবদ ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকাসহ মোট ১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে।