নারায়ণগঞ্জ শহরে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আটক আল জুবায়েরের নামে মামলা হয়েছে।
সদর মডেল থানায় বুধবার দুপুরে মামলা করেন নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী ও নিহত ঋতু চক্রবর্তীর বাবা রাম প্রসাদ।
থানার ওসি শাহ জামান এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাস্থল থেকে মঙ্গলবার জুবায়েরকে আটক করা হয়। বুধবারের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলার জন্য নেয়া হয়েছে।
ওসি আরও জানান, জুবায়ের এলাকায় স্বপ্নীল নামেও পরিচিত। মামলায় তাকেই একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
এজাহারের বাদী লিখেছেন, মঙ্গলবার তিনি ও তার ছেলে বাড়ির বাইরে ছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে তিনি খবর পান, তাদের ফ্ল্যাট যে ভবনে, সেটির নিচে অনেক লোক জড়ো হয়েছেন। তিনি গিয়ে দেখেন, অন্য ফ্ল্যাটের লোকজন বের হয়ে ভবনের ফটক বাইরে থেকে তালা দিয়ে রেখেছে। ভেতর থেকে তার ছেলে হৃদয়ের স্ত্রী ফারজানা আক্তার শিলা চিৎকার করছেন।
কী হয়েছে জানতে চাইলে শিলা বাদীকে জানান, তাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে এক যুবক রুমা ও ঋতুকে ছুরি দিয়ে কুপিয়েছে। শিলাকে হত্যার জন্য রান্নাঘরে বটি হাতে নেন হামলাকারী। তবে শিলা কৌশলে সেই বটি ছিনিয়ে নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে নিচে নামেন। হামলাকারী যুবক তাকে ধাওয়া করে নিচে নামে, তবে ততক্ষণে ভবনের অন্য লোকজন টের পেয়ে বাইরে থেকে ফটক আটকে দেয়। ওই যুবক ফের ৬ তলার ফ্ল্যাটটিতে ফিরে যায়।
রাম প্রসাদ এজাহারে আরও লেখেন, শিলার কাছ থেকে শুনে তিনি স্ত্রী রুমার মোবাইল ফোনে কল করলে তা রিসিভ করেন ওই যুবক। টাকা-গয়না কোথায় আছে জানতে চান। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। ততক্ষণে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। পুলিশসহ তিনি ফ্ল্যাটে গিয়ে ওই যুবককে আটক করেন। উদ্ধার করা হয় মরদেহ।
ঘটনাস্থলেই জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক নিজেকে জুবায়ের বলে পরিচয় দেন। তিনি জানান, প্রত্যেক ফ্ল্যাটের বেল বাজিয়েছিলেন। এই ফ্ল্যাটেরই দরজা খোলা হয়েছে।
থানার ওসি জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুবায়ের হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
জুবায়ের নগরীর পাইকপাড়ার আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে।
রাম প্রসাদ বলেন, ‘আমার মেয়ে ঋতু ৬ মাস ১৬ দিনের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। ওর স্বামীর বাড়ি চট্টগ্রামে। আমার স্ত্রী ও মেয়ের হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (তদন্ত) আমির খশরু বলেন, ‘আটক জুবায়েরকে নিহতদের পরিবারের কেউ চেনে না। ঘটনার পর জুবায়েরের ব্যাগ থেকে নিহত ঋতুর স্বর্ণের চেইন উদ্ধার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে চারটি ছুরি ও কয়েকটি হ্যান্ড গ্লাভস।’
সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত রুমার শরীরের ৬ জায়গায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তার মেয়ে ঋতুর শরীরের সামনে ও পেছনে তিনটি ছুরি ঢুকানো ছিল। আরও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
জুবায়েরের বাবা আলাউদ্দিন মিয়া জানান, তিনি শহরের টানবাজারের লবণ ব্যবসায়ী। তার ছেলে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করে। এরপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়। তবে আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় পড়ালেখা চালাতে পারেনি। এক-দেড় মাস ধরে তার ছেলে অস্বাভাবিক আচরণ করছিল।