মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস স্মরণের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) উদযাপন হলো ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস।
১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাবির কলাভবন সংলগ্ন বটতলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল।
দিবসটি উপলক্ষে বুধবার কলাভবন সংলগ্ন বটতলায় জাতীয় সংগীত গাওয়ার পর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান।
পতাকা উত্তোলন শেষে উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা ২রা মার্চকে পতাকা উত্তোলন দিবস হিসেবে জানে, কিন্তু এই দিবসের তাৎপর্য ও পটভূমি সম্পর্কে জানাও গুরুত্বপূর্ণ।’
এ দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, ‘একটি জাতিরাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান দরকার হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এরই প্রেক্ষিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পতাকা তৈরির দিকে মনোনিবেশ করেন।
‘একটি পতাকায় দেশের ভৌগোলিক তাৎপর্য বহন করে। দেশের প্রথম পতাকার নকশা তৈরি করা হয়েছিল তৎকালীন ইকবাল হলে (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল)। এই পতাকা তৈরি ছিল একটি জাতিরাষ্ট্র গঠনের প্রধান অনুপ্রেরণা।’
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভবনে ও তার নির্দেশে সারা দেশে এই পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। সেই দিবসের তাৎপর্য আলাদা। এটি মূলত পাকিস্তান দিবস।
‘২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস হিসেবে তারা তাদের পতাকা উত্তোলন করেন, কিন্তু সেদিন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের পদক্ষেপে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কবর রচিত হলো, আর বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের জন্ম হলো।’
মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নাই, যেটি একটি জাতিরাষ্ট্র গঠনের জন্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেদের নিয়োজিত রেখেছিল, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে জাতিরাষ্ট্র গঠনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল মানচিত্র খচিত লাল সবুজের পতাকা।
‘সেই পতাকার মর্যাদা রক্ষার্থে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করেছিল শিক্ষার্থীরা।’
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘১৯৭১ সালে এই জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে নির্দেশনা দেয়া হয় যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আসন্ন। এখন আমরা এটি পালন করি এ দেশের তরুণ প্রজন্মকে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করতে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আন্দোলনের সুতিকাগার। সে সময় যে ছাত্রবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তারাই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা জাতির কাছে পৌঁছে দিতেন। আমি তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।’
তরুণ সমাজের উদ্দেশে মাকসুদ কামাল বলেন, ‘এখনও বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর মতো ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এ দেশের তরুণ সমাজকে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
‘এই শকুনের বিরুদ্ধে যদি আন্দোলনের ডাক আসে, সে আন্দোলনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার জন্য তোমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
শিক্ষকদের বক্তব্য শেষে বটতলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা সংগীত এবং নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, কলা অনুষদের ডিন ও বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ ড. আব্দুল বাছির, রেজিস্ট্রার ড. প্রবীর কুমার সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. রহমতুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়া।