ইউক্রেনে চলমান রুশ সামরিক অভিযান বন্ধের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশে থাকা ইউক্রেনের নাগরিকরা।
‘নো টু ওয়ার, পিস ইন ইউক্রেন’ (যুদ্ধকে না, ইউক্রেনে শান্তি) লেখা ব্যানার নিয়ে বুধবার তারা জড়ো হন প্রেস ক্লাবে।
রুশ অভিযানের সপ্তম দিনে ইউক্রেনের নাগরিকরা জানান, ইউক্রেনে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যরা বিপদে আছেন। কাউকে কাউকে লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত ইউক্রেনের নাগরিক ও ইউক্রেনে থাকা বাংলাদেশিদের স্বজনরা ওই মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া ৪৩ বছর বয়সী সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি গত ২৪ বছর ধরে ইউক্রেনে থাকেন। তিনি এখন ইউক্রেনের নাগরিক।
সাইফুল জানান, গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশে আসেন। তার ২ মার্চে ইউক্রেনে ফেরার ফ্লাইট ছিল, কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তিনি ফিরে যেতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও বাচ্চা ইউক্রেনে আছেন। ইউক্রেনের অবস্থা খুবই খারাপ। পরিবারের সদস্যরা বাসা থেকে বের হতে পারছে না।’
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানে দেশটিতে আটকা পড়েছেন অনেক দেশের নাগরিকরা। তাদের অনেককে ভূগর্ভস্থ রেলে কিংবা নিরাপদ অন্য কোথাও লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
গত ৩০ বছর ধরে ইউক্রেনে থাকছেন ইসলাম গাউছুল শাহেদ। তিনি সেখানে ব্যবসা করেন। গেল ১৯ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশে আসেন।
১০ মার্চ ইউক্রেনে ফেরার কথা ছিল গাউছুলের; টিকিটও কাটা ছিল, তবে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তিনি যেতে পারছেন না।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ইউক্রেনীয় নাগরিকের স্ত্রী ও মেয়ে ইউক্রেনেই আছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার নিয়ে বড়ই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তারা খুব ভয়ে দিন কাটাচ্ছে।’
গাউছুল জানান, তার পরিবার বাসা থেকে বের হতে পারছে না। ইউক্রেনের রাজধানীতে রাস্তাঘাটে বোমা বর্ষণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান, ইউক্রেনের যুদ্ধ থামাতে তারা যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেন।’
মানবন্ধনে অংশ নেয়া আকসানা লাপিকবা জানান, তিনি ইউক্রেনের নাগরিক। বৈবাহিক সূত্রে গত ২০ বছর ধরে ঢাকায় আছেন। ইউক্রেনে তার মা, ছোট বোন ও বোনের সন্তান থাকে।
লাপিকবা বলেন, ‘আমার মা ও বোনের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা বলি, তবে তারা অনেক কষ্টের মধ্যে আছেন। আমার মায়ের বয়স ৭২ বছর।
‘তিনি বাসা থেকে বের হতে ভয় পান; সুপার মার্কেটে কেনাকাটা করতে যেতে পারেন না। খাওয়ার ব্যবস্থা কম হচ্ছে; অভাব আছে।’
আকসানা লাপিকবা বলেন, ‘ইউক্রেনে যা হচ্ছে, কোনো সুস্থ মানুষ এটা মেনে নিতে পারবে না। ইউক্রেনের নাগরিক আমরা যুদ্ধ চাই না; শান্তি চাই।
‘আমার দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা চাই। যেকোনো সমস্যার সমাধান করা যায় যুদ্ধ ছাড়াই।’