বছরের শুরুতে নেয়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) কাটছাঁট করেছে সরকার। মূল এডিপি থেকে প্রায় ৮ শতাংশ কমিয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বুধবার এনইসি সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বছরের বাকি সময়ের জন্য আরএডিপি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটা মূল এডিপি থেকে কিছুটা কমেছে।’
অর্থবছরের শুরুতে মূল এডিপি ছিল দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার। সংশোধিত এডিপিতে কমেছে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা।
মোট বরাদ্দের মধ্যে বৈদেশিক সহায়তার অংশ ৭০ হাজার ২৫০ কোটি এবং দেশীয় অর্থায়ন ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রায় ৯ হাজার ৬১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা সংশোধিত এডিপিতে যোগ হবে। এতে এডিপির সর্বমোট আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ১৭ হাজার ১৬৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও দেশের সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা নিয়ে এডিপি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়।
এডিপির সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার, কোভিড-১৯ মোকাবিলা, অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন তথা দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, অনুমোদিত আরএডিপির চেয়ে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদা অনেক বেশি ছিল। মোট ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৭ কোটি চাহিদা ছিল। আরএডিপিতে নতুন প্রকল্প বেড়েছে ২৩৬টি। মোট প্রকল্প দাঁড়িয়েছে ১৭০০টিতে।
এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৫২০, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৪২ এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ১০৮টি প্রকল্প।
খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ
পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে প্রায় ৫৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা (২৬.৯০%) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে প্রায় ৩৯ হাজার ২১৪ কোটি টাকা (১৮.৮৯%), গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলীতে প্রায় ২৩ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা (১১.৩৭%), শিক্ষায় প্রায় ২০ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা (১০.০৩%) বরাদ্দ দেয়া হয়।
এর বাইরে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে প্রায় ১৫ হাজার ৫২০ কোটি (৭.৪৮%)। স্বাস্থ্যে প্রায় ১৩ হাজার ৭৯৭ কোটি (৬.৬৫%), পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদে প্রায় ৯ হাজার ৮৫ কোটি টাকা (৪.৩৮%) বরাদ্দ দেয়া হয়।
কৃষিতে প্রায় ৭ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা (৩.৫১%), শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় প্রায় ৪ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা (২.১৯%), জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় প্রায় ৩ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা (১.৬৮%) বরাদ্দ হয়।
এই ১০ খাতে ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা বা ৯৩.০৮% বরাদ্দ রয়েছে।
মন্ত্রণালয়/বিভাগভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ
১. স্থানীয় সরকার বিভাগে বরাদ্দ প্রায় ৩৪ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
২. সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে বরাদ্দ প্রায় ২৮ হাজার ২৯২ কোটি টাকা।
৩. বিদ্যুৎ বিভাগে বরাদ্দ প্রায় ২২ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা।
৪. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রায় ১৫ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা।
৫. রেলপথ মন্ত্রণালয়ে প্রায় ১২ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।
৬.স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে বরাদ্দ প্রায় ৯ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।
৭. প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ প্রায় ৯ হাজার ২০৭ কোটি টাকা।
৮. মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ প্রায় ৮ হাজার ২৬০ কোটি টাকা।
৯.পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ প্রায় ৭ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা।
১০. সেতু বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৫ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।