বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও বেড়েছে। যুদ্ধের দামামায় প্রতি ব্যারেলের দর ১০৫ ডলার ছাড়িয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় নিউ ইয়র্ক ফিউচার মার্কেটে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দর ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়ে ১০৭ ডলারে উঠেছে। আর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেল প্রতি ব্যারেল ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ১০৫ ডলার ৭৫ সেন্টে বিক্রি হচ্ছে।
এই দুই ধরনের তেলের দামই গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালের পর এতো উচ্চতায় তেলে দাম উঠেনি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর এক লাফে ব্রেন্ট ক্রুড ওয়েলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ওয়েলের দর প্রায় ১০০ ডলারে পৌঁছে।
কিন্তু গত কয় দিনে খানিকটা কমে দুই ধরনের তেলের দামই ১০০ ডলারের নিচে অবস্থান করে। কিন্তু ইউক্রেন সংকট এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় তেলের দাম ফের বেড়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল রপ্তানি করে রাশিয়া। সেইসঙ্গে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস রাশিয়াতেই উত্তোলন করা হয়। আর ওই গাসের ওপর ইউরোপ অনেকটা নির্ভরশীল।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারীর শুরু থেকেই চাপের মধ্যে ছিল বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার। সংকট কাটিয়ে উঠতে চাহিদার সঙ্গে যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
সৌদি আরবের নেতৃত্বে ওপেক জোট উৎপাদন বাড়িয়ে সংকট কাটানোর চেষ্টা করছে। তবে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় জ্বালানি তেলের বাজার যে অস্থির হয়ে উঠবে তা আগেই বোঝা যাচ্ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই ‘আগুনে ঘি ঢেলেছে’।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কে গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেলের দাম কমতে কমতে ৬৬ ডলারে নেমে গিয়েছিল। ব্রেন্ট তেলের দর কমে হয়েছিল ৬৮ ডলার।
তিন-চার দিন ওই একই জায়গায় স্থির ছিল তেলের বাজার। কিন্তু ওমিক্রন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও করোনার নতুন ওই ধরনে আক্রান্ত হয়ে মানুষ খুব একটা মারা না যাওয়ায় এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বেশ খানিকটা কেটে যায়। এতে বিশ্বে তেলের চাহিদা বাড়বে- এ সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আবার বাড়তে শুরু করে দাম।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এরপর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবর মাসে এই দাম ৮৫ ডলারে উঠে।