রোমানিয়া পাঠানোর কথা বলে ৩০০ জনের কাছ থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ায় অভিযোগে সিলেটের ট্রাভেল এজেন্সি আমিন রহমান ট্র্যাভেলসের সত্ত্বাধিকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থেকে আমিন রহমান নামে ওই ব্যক্তিকে মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের ছাতকের আমিন নগরের উপশহরে ভাড়া বাসায় থাকেন।
তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলী মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘রোমানিয়া যেতে ইচ্ছুক অন্তত ৩০০ জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমিন দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমরা আগে থেকেই সব বিমানবন্দরকে সতর্ক করে দেই। তিনি পালাতে না পেরে আজ (মঙ্গলবার) ঢাকা থেকে ফিরে আসছিলেন। এ সময় দক্ষিণ সুরমা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।’
আমিন ও তার দুই ভাইয়ের নামে গত শনিবার মানবপাচার আইনে মামলা করেন ফখরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।
নগরের জিন্দবাজার এলাকার হক সুপার মার্কেটের আমিন ট্রাভেলসের কার্যালয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, রোমানিয়া পাঠানোর কথা বলে বাদীর মতো অনেকজনের কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন আমিন রহমান। টাকা নিয়ে কাউকে ভিসা দেননি তিনি। অনেকের পাসপোর্টে জাল ভিসা লাগিয়ে প্রতারণা করেছেন।
মানবপাচারের মামলায় গ্রেপ্তার ট্রাভেল এজেন্সির মালিক আমিন রহমান
ওই ট্রাভেলস এজেন্সিকে টাকা জমা দেয়া কয়েকজন যুবক জানান, তিন মাস আগে ৯০ দিনের মধ্যে রোমানিয়া পাঠানোর কথা বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় আমিন রহমান ট্রাভেলস।
বিজ্ঞাপনে বলা হয়, রোমানিয়া যেতে ৬ লাখ টাকা লাগবে। প্রথমে বুকিং মানি হিসেবে ৫০ হাজার টাকা এবং ওয়ার্ক পারমিট আসার পর দিতে হবে আরও ৫০ হাজার টাকা। বাকি ৫ লাখ টাকা দিতে হবে ভিসা হওয়ার পর।
মামলার বাদী ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমিন জানান আমার ভিসা হয়ে গেছে। এরপর আমি তাকে চুক্তির সব টাকা দেই। মোট ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি তাকে। টাকা নেয়ার পর থেকেই তিনি লাপাত্তা হয়ে গেছেন। আমার পাসপোর্টও ফেরত দিচ্ছেন না।’
আরেকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রোমানিয়ায় ফ্লাইট দেয়া শুরুর কথা বলেছিলেন এজেন্সির মালিক আমিন রহমান। ওই দিন তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে কারও ফোন ধরেননি তিনি। বিকেলে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে তার আর খোঁজ মিলছে না। যাদের পাসপোর্টে ভিসা লাগানো হয়েছিল সেগুলোও জাল।
আরও পড়ুন: ৩০০ যুবকের ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে ট্রাভেল এজেন্সি ‘উধাও’
জয়া হাসান নামের একজন বলেন, ‘আমরা দুজন মিলে তাকে ৬ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। ২৪ তারিখে আমার ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। ফ্লাইটের কথা বলে আমাদের ঢাকায়ও নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু ঢাকা যাওয়ার পর থেকে তার খোঁজ নেই। আমার পাসপোর্টও ফেরত পাইনি।’
জয়া বলেন, ‘আমিন রহমান একটা হোয়াটস অ্যাপ নাম্বার থেকে জানিয়েছিলেন, রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে কিছুটা ঝামেলা হচ্ছে। ওই ঝামেলা মিটমাট করতে তিনি দুবাই গেছেন। তবে শনিবার থেকে হোয়াটস অ্যাপেও পাওয়া যাচ্ছে না তাকে।’
আমিন ট্রাভেলসকে টাকা দিয়েছিলেন বিয়ানীবাজারের যুবক সপ্ত দাসও। তিনি বলেন, ‘জায়গা বিক্রি করে বাবা টাকা দিয়েছিলেন আমাকে। এখন বাবাও অসুস্থ। প্রতারণার বিষয়টি বাসায়ও জানাতে পারছি না।’
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী জানান, মামলার তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।