এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে রপ্তানি। আর রপ্তানি বাড়াতে হলে পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। একই সঙ্গে শুল্ক কাঠামো আধুনিকায়নে জোর দিতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরই ও বিশ্বব্যাংক আয়োজিত ‘বুস্টিং বাংলাদেশ ট্রেড কম্পিটিটিভনেস’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার বিকেলে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, অনেক বছর ধরে বাংলাদেশ পণ্যের বহুমুখীকরণ নিয়ে কথা বলে এলেও এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। রপ্তানি খাত এখনও মাত্র একটি পণ্য তথা তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল।
২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ আর স্বল্পোন্নত দেশ থাকবে না। তখন বাংলাদেশকে কঠিন প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে। বাংলাদেশের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে কৌশল নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী কাজ করা।
রপ্তানি প্রতিযোগিতায় সহায়তার জন্য নমনীয় সুদহার কার্যকর, প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ স্বাক্ষর, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয় আরও কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন বক্তারা।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ড. নোরা কারিনা ও সিশিলা লেকাটোস।
বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের আরেক অর্থনীতিবিদ ড. হোন শো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন, ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ ও গবেষণা পরিচালক ড. আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাণিজ্য হচ্ছে প্রধান চালিকাশক্তি। তাই রপ্তানি বাড়াতেই হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আমাদের সামনে যে অভিঘাত আসবে তার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, ‘দেশের আনাচে-কানাচে অনেক উদ্যোক্তা আছেন। তাদের মধ্যে, বিশেষ করে নারীরা আন্তর্জাতিক বাজার অনুসন্ধান সম্পর্কে ভালো জানেন না। তাদের সহায়তা করা গেলে রপ্তানি বাড়বে এবং ক্ষুদ্রশিল্প (এসএমই) খাত বিকশিত হবে।’
রপ্তানি বাড়াতে নতুন নতুন বাজার খোঁজার ওপর গুরুত্ব দেন রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, ‘জার্মানিতে মোট পোশাক রপ্তানির ৫৩ শতাংশ যায় বাংলাদেশ থেকে। অথচ আফ্রিকা ১ শতাংশ ও এশিয়ায় যায় ১১ শতাংশ। অনেক বছর ধরে পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানের কথা বলা হলেও কার্যত কোনো লাভ হয়নি। এখনও একটি পণ্যের ওপর রপ্তানি খাত নির্ভরশীল। নতুন বাজার খুঁজতে হবে। তার সঙ্গে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে।’
ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, ‘রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সংরক্ষণমূলক শুল্ক কাঠামো বাধা হিসেবে কাজ করছে। রপ্তানি আয় আরও বাড়াতে হলে পণ্য বহুমুখীকরণের পাশাপাশি বিদ্যমান শুল্ক কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে।’
রপ্তানি সহায়ক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ট্যারিফ কাঠামো আধুনিকায়নের পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদ নোরা কারিনা।