ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের প্রতিবাদে ও দোষীদের বিচার দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি আরও ৪৮ ঘণ্টা পালনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
নিউজবাংলাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক মনির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রোববার রাতে শিক্ষকদের এক সভায় ৪৮ ঘণ্টা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা দেন তারা। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো কলেজে ক্লাস নিতে আসেননি কোনো শিক্ষক। শিক্ষার্থীরাও আসেননি ক্লাস করতে। ফলে গোটা ক্যাম্পাস ছিল ফাঁকা।
এবার দ্বিতীয় দফায় ডাকা এ কর্মসূচি চলবে বুধবার ও বৃহস্পতিবার।
দ্বিতীয় দফায় কর্মসূচি বাড়ানোর কারণ হিসেবে কলেজের অধ্যাপক মনির হোসেন বলেন, ‘প্রতিবেদন জমা দিতে তদন্ত কমিটির হাতে আরও দুই দিন সময় রয়েছে। সে জন্য আমাদের কর্মসূচি আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘শনিবার সভা করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করলেও হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে গত বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিক্যালের কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিল অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী।
তখন শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছিল, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ম-৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তার কারণে ওই শিক্ষার্থী কলেজ ছেড়ে চলে গেছেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছেন।
তাৎক্ষণিক বিষয়টি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ওই ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং কলেজের শিক্ষকসহ হাসপাতালের চিকিৎসকদের মাঝে।
তাদের দাবি, যৌন হয়রানির শিকার ওই শিক্ষার্থীর পরিচয় কেউ জানেন না। এগুলো শিক্ষকের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। কারও ইশারায় বানোয়াট অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ চিত্ত রঞ্জন দেবনাথের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ম-৫৩ ব্যাচের সব শিক্ষার্থী।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ‘বুধবারের মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের কেউ ম-৫৩ ব্যাচের ছিল না। তাদের এ বিষয়ে জানানোও হয়নি।’
এমন দাবির পর মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। অনেকেই মানববন্ধনে অংশ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, সেদিন তাদের জোর করে মানববন্ধনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। না গেলে নানা রকম সমস্যা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। কে তাদের বাধ্য করেছিল তা বলেননি কোনো শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় গাইনি বিভাগের অধ্যাপক তায়েবা তানজিন মির্জাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হান্নান মিয়া ও শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক লোকমান হোসেন। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।