পরীক্ষার্থী পরিবর্তন হলেও কেন্দ্র অভিন্ন। সদ্য বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশন পাঁচ বছর আগে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম পরীক্ষাটা দিয়েছিল কুমিল্লায়। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে গঠিত নতুন কমিশনকেও একই কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে ভোট আয়োজনে হিসাবের খাতা খুলতে যাচ্ছে নতুন নির্বাচন কমিশন। আস্থা, সক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণে বর্তমান কমিশনের জন্য এই ভোট আসছে চ্যালেঞ্জ হয়ে।
পাঁচ বছর আগে কুমিল্লা সিটির ভোট দিয়েই জনগণের কাছে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছিল সদ্য বিদায় নেয়া কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। সেই প্রথম পরীক্ষায় হুদা কমিশন অবশ্য উত্তীর্ণ হয়েছিল। ওই ভোট নিয়ে কট্টর সমালোচকদের মুখেও ছিল প্রশংসা।
কিন্তু যাত্রা শুরুর সেই ধারাবাহিকতা রাখতে পারেনি হুদা কমিশন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ইসি। রাজনৈতিক দল কিংবা নির্বাচনি অংশীজনদের সমালোচনা তো বটেই, কমিশনের অন্যতম সদস্য ইসি মাহবুব তালুকদারের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধ নিয়ে বিব্রত হতে হয়েছে সিইসি নূরুল হুদাকে।
তাৎপর্যের বিষয় হলো, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর বড় আয়োজন হিসেবে তাদের কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোট করতে হচ্ছে। অবশ্য এর মধ্য দিয়ে বর্তমান কমিশন নিজেদের আস্থার জায়গায় নেয়ার একটা সুযোগও পাচ্ছে।
বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশন মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করলেও তা করে যেতে পারেনি।
যাত্রার শুরুর এই পরীক্ষায় আউয়াল কমিশন কতটা নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারবে, তা নিয়ে অবশ্য তড়িঘড়ি মন্তব্য করতে চাইছেন না নির্বাচন বিশ্লেষকরা। আউয়াল কমিশনকে পর্যবেক্ষণে রাখতে চান তারা।
নতুন কমিশনের সামনে প্রথম কোন নির্বাচন আছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বড় কলেবরে আয়োজনের মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনই প্রথম করতে হবে। তার আগে অবশ্য ৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটের আয়োজন করতে হবে। বর্তমান সময়ের মধ্যে স্থানীয় সরকারের কুমিল্লা সিটিই নির্বাচন উপযুক্ত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ভোট আয়োজনে কাউন্টডাউনও শুরু হয়ে গেছে।’
নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান কমিশন যেভাবে গঠিত হয়েছে সেই পদ্ধতির সমালোচনা করেছি আমরা। এখন একটা কমিশন হয়ে গেছে। মানুষগুলো মাত্রই দায়িত্ব নিয়েছেন। এখনই তাদের সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা যায় না।
‘যিনি সিইসি হয়েছেন তার সম্পর্কে একটা বিষয় জানতে পারছি যে তার ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। অনেকেই মনে করেন তার সাহস আছে। কাজটা তিনি কীভাবে করছেন, সেটা দেখে বলা যাবে যে কাজটা ঠিকমতো করতে পারছেন কি পারছেন না।’
তবে রোববার শপথ নেয়া শেষে নতুন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রতিটি নির্বাচনকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবনটাও একটা চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনও একটা চ্যালেঞ্জ। কোনো চ্যালেঞ্জকে ভয় পেলে চলবে না। চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হবে।’
বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশন ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে ভোটের আয়োজন করে। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ১৭ মে। সে হিসাবে ২০২২ সালের ১৬ মের মধ্যে এই সিটির নির্বাচন আয়োজনে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন অনুযায়ী, নির্বাচিত করপোরেশনের মেয়াদ প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। সে হিসাবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের ১৬ মে। আর ভোট গ্রহণ করতে হয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। সে হিসাবে গত ১৬ নভেম্বর থেকে এ সিটি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়ে গেছে।
কুমিল্লা সিটির সর্বশেষ নির্বাচনের সময় মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন। ভোট পড়ে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৯০টি। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানার নৌকা প্রতীক পেয়েছিল ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।
২০১১ সালে দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠন করা হয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এই সিটিতে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি প্রথম নির্বাচন আয়োজন করে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বের নির্বাচন কমিশন।