সাতক্ষীরা শহর থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে পারকুখরালী এলাকার একটি বাড়ি। বাড়ির ভেতরে গেলেই চোখে পড়বে দুটি কক্ষে ঝোলানো মাশরুম চাষের পলিব্যাগ, খড়, মাদারস্পন, দড়ি, হাইগ্রোমিটার স্পেয়ার, রাবার ব্যান্ডসহ বিভিন্ন উপকরণের তৈরি প্যাকেট। এর মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসছে মাশরুম।
সাতক্ষীরা শহরতলির পারকুখরালী এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন। মাশরুম চাষ করে বেশ সাড়া ফেলেছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা। প্রতি মাসে মাশরুম বিক্রি করে তার আয় হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জেলার অন্য তরুণরাও মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসের ন্যাশনাল সার্ভিসে চাকরি করতেন সাদ্দাম। এ সুবাদে সাদ্দামের সঙ্গে পরিচয় হয় কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেনের। তার মাধ্যমে জানতে পারেন মাশরুম চাষের সুফল।
মাশরুম চাষে ভালো আয়ের সুযোগ আছে জেনে শহরের পারকুখরালী কাঁঠালতলা এলাকায় টিনশেডের দুটি রুমে চাষ শুরু করেছেন সাদ্দাম।
মাশরুম চাষি সাদ্দাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মাশরুম নিয়ে কাজ করার সময় দেখি অনেক সম্ভাবনা এর মধ্যে আছে। নিজের চেষ্টায় মার্কেটিং কীভাবে করা যায় ভাবতে থাকি। এ জন্য কাস্টমার পয়েন্ট, বিভিন্ন ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মাশরুম সবার সামনে উপস্থাপন করি।’
দুই বছর আগে মাশরুম চাষ শুরু করলেও বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করছেন এক বছর আগে থেকে।
এরই মধ্যে চাষ পদ্ধতি, পরিচর্যা ও বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়া আয়ত্ত করে নিয়েছেন সাদ্দাম।
ওয়েস্টার জাতের মাশরুম বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন তিনি। বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরে ‘কসমিক মাশরুম ক্যাফেটেরিয়া’ নামের একটি খাবারের রেস্তোরাঁ করেছেন সাদ্দাম।
সেখানে পাওয়া যায় মাশরুমের চপ, খিচুড়ি, চাওমিন, নুডলস, কফিসহ নানা রকমের খাবার। প্রতিদিন বিকেলে সেখানে ভিড় জমে ক্রেতাদের।
মাশরুমের চপ খেতে আসা রাহাত রাজা বলেন, ‘ব্যাঙের ছাতার মতো দেখা যাওয়ায় এটি অনেকে খায় না। আমারও প্রথম দিকে ভালো লাগত না। প্রথম দিন খেয়ে দেখি খুব সুস্বাদু, সেখান থেকে মাশরুম খাওয়ার প্রতি একটা ভক্তি চলে আসল। এখন মাশরুমের কথা বললে না খেয়ে আর স্থির থাকতে পারি না।’
সাদ্দামের পরামর্শ নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেছেন শিক্ষার্থী অঞ্জলি বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘পড়াশোনা শেষে চাকরি না পেয়ে মাশরুম চাষে আগ্রহী হই। জানতে পারি কসমিক মাশরুম সেন্টারে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ উদ্যোগে ১০০ প্যাকেট দিয়ে শুরু করেছি।’
‘আমি মেসে থাকি, সেখানে মাশরুম চাষ শুরু করেছি। মাসে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা ইনকাম হচ্ছে।’
আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল করিম বলেন, ‘অনেক দিন ফ্রি সময় কাটাচ্ছি। তাই ভাবলাম কিছু করতে হবে। সে জন্য মাশরুমের দিকে ঝুঁকে পড়ি। মাশরুম নিয়ে অনেক রিসার্চ করে দেখলাম মার্কেটটা অত ভালো না। পরে কসমিক মাশরুম পয়েন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেখলাম তাদের ভালোই সাড়া আছে। সেখান থেকে আমি মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে চাষ শুরু করি।’
শহরের পারকুখরালী এলাকার রাজু বলেন, ‘সাদ্দামের পরামর্শে প্রথমে ১২ হাজার প্যাকেট নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেছি। উৎপাদন শুরু হলে প্রতিদিন ৫০০ থেকে এক হাজার কেজি মাশরুম উৎপাদন হবে। যেটি স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির পাশাপাশি দুটি দেশে বায়ারের মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টা করছি।’
সাতক্ষীরার মাশরুম চাষিরা জানান, সাভারের মাশরুম গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বীজ সংগ্রহ করেন তারা। ৫০০ গ্রামের এক প্যাকেট বীজ সংগ্রহ করতে খরচ হয় ৪০ টাকা। ২৫০ গ্রামের প্যাকেটে খরচ হয় ৩০ টাকা। তবে মাশরুমের বিষয়ে প্রচারণা কম। এর উপকারিতা ও ব্যবসায় লাভ সম্পর্কে প্রচারণা প্রয়োজন বলেও মনে করেন এই মাশরুম চাষিরা।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সাদ্দাম সাতক্ষীরার প্রথম মাশরুম চাষি। তবে এখন সাতক্ষীরায় ৫০ থেকে ৬০ জন পারিবারিকভাবে মাশরুম চাষ করেন। আমরা মাশরুম চাষে অনেক চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’