‘জাগো বাহে কুনঠে সবাই, ঠাকুরগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চাই’, ‘বিশ্ববিদ্যালয় চাই, দিতে হবে’, ২০১৩ সালে এমন স্লোগানে নিজেদের দাবি জানিয়েছিলেন ঠাকুরগাঁওবাসী।
জেলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য করা হয়েছিল গণসংযোগ, মানববন্ধন। নেয়া হয়েছিল সাড়ে ৩ লাখ গণস্বাক্ষর।
প্রায় ৯ বছর পর পূরণ হতে যাচ্ছে এই দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদকর্মীদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
২০১৩ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম দাবি তোলেন আইনজীবী নূরুস সাদিক চৌধুরী। প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে গড়ে তোলেন ঠাকুরগাঁওয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চাই ঐক্য পরিষদ।
প্রতিটি উপজেলায় গিয়ে সংগ্রহ করা হয় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের স্বাক্ষর। গণস্বাক্ষর সংযুক্ত করে জেলা প্রশাসককে দেয়া হয় স্মারকলিপি।
ঠাকুরগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০১৩ সালে করা মানববন্ধন। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদনের পর সাদিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও নতুন প্রজন্মের মেধা বিকাশের লক্ষ্য নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি তুলি। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
‘বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে এই প্রত্যাশা করি। ঠাকুরগাঁওয়ের সাড়ে ৩ লাখ মানুষের গণস্বাক্ষর এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আসছে। আমি সরকারকে এমন সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ জানাই।’
স্থানীয় তরুণ উদ্যোক্তা মাহফুজুল ইসলাম শুভ বলেন, ‘যে সময় আমরা ঠাকুরগাঁওয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি তুলি তখন আমি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। ঢাকায় পড়াশোনা করতাম। বুঝতাম বাইরে থেকে পড়ালেখা করতে কত কষ্ট হয়! জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হলে মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে।’
শিক্ষাবিদ মনতোষ কুমার দে বলেন, ‘এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলে উচ্চ শিক্ষার হার বাড়বে। পাশাপাশি যে এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে, সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হবে। মানুষ সচেতন হবে। যাতায়াতব্যবস্থা উন্নত হওয়ার পাশাপাশি এই জেলা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।’
জীবনমাত্রার মান উন্নয়নের আশা প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমানও।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা জনগণের নেত্রী। তিনি জনগণের জন্য কাজ করেন৷ ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ঠাকুরগাঁওয়ে এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাও বলেন।
‘আমরা ঠাকুরগাঁওবাসী অত্যন্ত আনন্দিত। সদর উপজেলার শিবগঞ্জ বিমানবন্দর এলাকার উত্তরে মুক্তা মেলার পাশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২২-এর খসড়া নীতি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি হবেন এখানকার আচার্য। তিনি স্বনামধন্য একজন শিক্ষাবিদকে চার বছরের মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেবেন। দুজন থাকবেন উপ-উপাচার্য, একজন ট্রেজারার।