খুলনার কয়রা উপজেলার ৩ নম্বর কয়রা গ্রামের কৃষক আবুল হাসান। নিজ জমিতে বছরের পর বছর চাষ করেছেন দেশি জাতের বেগুন। তবে এ বেগুন চাষে লাভ পেতেন খুবই কম। পোকা মাকড় আর পাখির আক্রমণ তো আছেই, সঙ্গে ওজনও কম। কীটনাশকেও খরচ হত অনেক টাকা।
অবশেষে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শে চাষ করেন বারি বিটি-৪ জাতের বেগুন।
৩ বিঘা জমির ওপর পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচ হাজার ৬00 চারা রোপণ করে কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই পান বাম্পার ফলন।
আবুল হোসেন বলেন, ‘এ বছরে ৩ বিঘা জমিতে অন্তত ১৮ থেকে ২০ টন বেগুন পাওয়া যাবে, যা বিক্রি হবে সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। দুই মাসে গড়ে এক লাখ ৫০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি হয়েছে। সামনে আরও দুই লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারব।’
ক্ষেত থেকে বেগুন সংগ্রহ করেছেন কৃষকরা। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য বেগুনের চেয়ে দেখতে সুন্দর ও মসৃণ হওয়ায় সবার আগে আমার বেগুন বিক্রি হয়ে যায়। দামও ভাল। তাছাড়া বাইরের জেলার পাইকারি বেপারিরা বেগুন কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি বেগুন খুচরা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। পাইকারি বিক্রি করি ২৫ থেকে ৩০ টাকা।’
গ্রামের আরেক কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে বিটি বেগুন চাষ করেছি। বেগুনে পোকা না থাকায় সবার আগে বেগুন বিক্রি করে বেশি লাভবান হয়েছি।’
৪ নম্বর কয়রা গ্রামের কৃষক গোপাল সরদার বলেন, ‘এ বছর আমি ৩ বিঘা জমিতে বিটি বেগুন চাষ করেছি। এতে কোনো কীটনাশক স্প্রে করা লাগে না। এই বেগুন চাষে খরচ কম। লাভ বেশি। আমাকে দেখে এবার অনেকেই বিটি বেগুন চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’
কৃষি বিভাগ জানায়, প্রতি বছর বেগুন চাষের সময় পোকার আক্রমণে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বেগুন মাঠেই নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য প্রতি বছর দেশে ১৭ থেকে ২০ লাখ টন কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এ অবস্থায় বেগুন চাষে উৎপাদন খরচ বেড়ে যেত।
তবে বিটি বেগুন চাষে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা লাগে না বলে খরচ পুষিয়ে নিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ বেগুন চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
অন্যান্য অঞ্চলের কৃষকরা সফল হওয়ায় খুলনার কৃষকদেরও বিটি বেগুন চাষ করতে পরামর্শ দেয়া হয়। এ বেগুন চাষে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগ।
গবেষণা বিভাগের বৈজ্ঞানিক সহকারী জাহিদ হাসান জানান, ৩ নম্বর কয়রা গ্রামের প্রতি বাড়িতে বিটি বেগুন চাষ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জৈব পদার্থ ও পুষ্টি উপাদানযুক্ত দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি এবং উঁচু জমিতে এ বেগুন সবচেয়ে বেশি ভাল হয়। জমিতে সেচ দেয়ার পরে মাটি মালচিং করতে হয়। এরপর সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। এতে আগাছা নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রয়োজনীয় নিড়ানি ও মাটি মালচিং এবং বেড পদ্ধতিতে গাছ রোপণ করলে গাছের শিকড়ের বৃদ্ধি ভাল হয়।’
মাঠের কাজে ব্যস্ত সবাই। ছবি: নিউজবাংলা
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল শাহাদাৎ বলেন, ‘বারি বিটি বেগুন-৪ চারা রোপনের ১২০ থেকে ২২০ দিন পর্যন্ত ফসল সংগ্রহ করা যায়। ভাল ব্যবস্থাপনায় হেক্টর প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টন বেগুন উৎপাদন সম্ভব।’
খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. হারুনর রশিদ জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিটি বেগুনের ৪টি জাত উদ্ভাবন করেছে। বারি বিটি বেগুন ১, ২, ৩ ও ৪। বারির বিজ্ঞানীদের সার্বিক পরামর্শে পরীক্ষামূলকভাবে বিটি বেগুন চাষ করে কৃষকরা ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন।
বিষমুক্ত এ বেগুনের বীজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বীজের মধ্যে ব্যসিলাস থুরিনজিয়েনসিস (বিটি) জিন (ব্যাকটেরিয়া) যুক্ত করা হয়েছে। ফলে এর ফলনে এবং ডগায় পোকা আক্রমণ করতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবান্ধব বলেও জানান তিনি।