বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সময়মতো বিমা দাবি পরিশোধই খাতের ভাবমূর্তি বাড়াবে: কাজিম উদ্দিন

  •    
  • ১ মার্চ, ২০২২ ০৮:৫০

একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিমা অন্যতম অনুষঙ্গ। মানুষের জীবন ও সম্পত্তি বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এসব ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মতো জটিল কাজ আর্থিক খাতে একমাত্র বিমার মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে। সমাজে বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসন এবং পেনশন বিমার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও বিমা একটি কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে।

গ্রাহকরাই বিমা শিল্পের প্রাণ। গ্রাহকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমেই এ খাতের বিকাশ ঘটাতে হবে। বিমা সেবাকে একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও নিষ্ঠা এবং পেশাদারির সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। গ্রাহকের বিমা দাবি যথাসময়ে পরিশোধ, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিগুলো প্রতিপালন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও গ্রাহকবান্ধব সেবা প্রদানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে; সুশাসন নিশ্চিত হবে। দেশের অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান আরও বাড়বে।

১ মার্চ মঙ্গলবার জাতীয় বিমা দিবস উপলক্ষে নিউজবাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন দেশের প্রথম বেসরকারি জীবনবিমা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাজিম উদ্দিন।

নিউজবাংলা: একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিমা খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু বাংলাদেশে তেমনটি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১ শতাংশেরও কম। দেশের বিমা খাতে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। এ খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে আপনার পরামর্শ কী?

কাজিম উদ্দিন: একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিমা অন্যতম অনুষঙ্গ। মানুষের জীবন ও সম্পত্তি বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এসকল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মতো জটিল কাজ আর্থিক খাতে একমাত্র বিমার মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে। সমাজে বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসন এবং পেনশন বিমার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও বিমা একটি কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। তাই ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য নন-লাইফ (সাধারণ) বিমা এবং জীবনের ঝুঁকির জন্য জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের জনগণই বিমা শিল্পের প্রাণ। একমাত্র গ্রাহকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমেই এ শিল্পের বিকাশ সম্ভব। তাই বিমা সেবাকে একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও নিষ্ঠা এবং পেশাদারির সঙ্গে কাজ করতে হবে। গ্রাহকের বিমা দাবি যথাসময়ে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিগুলো অনুসরণ করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহক সেবা মান বাড়াতে হবে।

এ কথা ঠিক যে, আমাদের বিমা খাতে অস্থিরতা চলছে। এ খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে বিমা আইন-২০১০ বাস্তবায়নে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে; নজরদারি বাড়াতে হবে। জাতীয় বিমানীতি-২০১৪ কে যুগোপযোগী করে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে বিমা দাবি পরিশোধের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকরী পদক্ষেপ বিমা খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমি মনে করি। বিমা কোম্পানিগুলোকেও সময়মত বিমা দাবি পরিশোধ করতে হবে। গ্রাহক সেবার বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে।

নিউজবাংলা: দেশের জীবন বিমা খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ন্যাশনাল লাইফ। গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় কোন কোন বিষয়গুলোকে আপনারা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন?

কাজিম উদ্দিন: হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন, ন্যাশনাল লাইফ ১৯৮৫ সালের ২৩ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম বেসরকারি জীবন বিমা কোম্পানি। বেসরকারি খাতে প্রথম জীবন বিমা কোম্পানি হিসেবে আমরা আমাদের সফলতা ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় আমরা সময়মত বিমা দাবি পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।

২০২০ সালে আমরা ১ লাখ ৮৮ হাজার গ্রাহককে ৭৯৯ কোটি টাকা দাবি পরিশোধ করেছি, যার প্রেক্ষিতে ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা প্রিমিয়াম অর্জন করেছি। ২০২১ সালে ২ লাখ গ্রাহককে ৮৭২ কোটি টাকা দাবি পরিশোধ করি। ফলশ্রুতিতে ১ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা প্রিমিয়াম অর্জন করতে সক্ষম হই। বর্তমানে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫৭ লাখ। প্রিমিয়াম আয় ১৩ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা, লাইফ ফান্ড ৪ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা, বিনিয়োগ ৪ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা এবং মোট সম্পদ ৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।

নিউজবাংলা: বিমা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কোন কোন বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?

কাজিম উদ্দিন: আমি মনে করি প্রতিষ্ঠানের উন্নতির প্রধান বাহক হচ্ছে দক্ষ কর্মী। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে কর্মী/কর্মকর্তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী হিসেবে তৈরী করছি; যাতে তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের পরিচয়ের মাধ্যমে কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। বিমা শিল্পের প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে গ্রাহক। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী ছাড়া কখনও গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করা সম্ভব না।

নিউজবাংলা: এবারের বিমা দিবসে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

কাজিম উদ্দিন: সরকারিভাবে সারা দেশে ১ মার্চ বিমা দিবস পালিত হচ্ছে। আমরাও সরকারের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে বিমা দিবস পালন করছি। এছাড়া কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক মার্চ মাসে সেবা পক্ষ পালনসহ বিমা গ্রাহককে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান এবং বিমার প্রচার-প্রসারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরিককল্পনা নিয়েছি।

নিউজবাংলা: অন্য জীবন বিমা কোম্পানির চেয়ে আপনার প্রতিষ্ঠান কেন এগিয়ে? কিভাবে পরিচালনা করেন?

কাজিম উদ্দিন: আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে কোম্পানির পরিচালক, বিমা গ্রাহক, শেয়ারহোল্ডার এবং কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষার মাধ্যমে কোম্পানিকে পরিচালনা করা। গ্রাহক সেবা এবং সময়মত বিমা দাবি পরিশোধে আমরা সবসময় তৎপর; সে কারণে জীবন বিমা খাতে ন্যাশানাল লাইফের প্রতি সবার আস্থা বিদ্যমান আছে। আমাদের কোম্পানি সবসময় সরকারের কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন করে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। একারণে ন্যাশনাল লাইফ ইন্সটিটিউট অফ চাটার্ড সেক্রেটারিজ অফ বাংলাদেশ কর্তৃক ‘করপোরেট গভর্ননেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ অর্জন করেছে।

নিউজবাংলা: নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আইডিআরএ যে সব উদ্যোগ নিচ্ছে তা বিমা খাতের জন্য কতটা সহায়ক বলে আপনি মনে করেন?

কাজিম উদ্দিন: আইডিআরএ বিমা খাতের উন্নয়নে নানামূখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু আশার আলো বিমা দাবি পরিশোধের প্রয়াস’, বিভিন্ন বিধি-প্রবিধানমালা প্রণয়নসহ আরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সব উদ্যোগ বিমা খাতের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে আমি মনে করি। যে সকল কোম্পানি সময়মত বিমা দাবি পরিশোধ করছে না তাদের ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সময়মত বিমা দাবি পরিশোধই বিমা খাতের ভাবমূর্তি উজ্জল করতে সহায়তা করবে।

নিউজবাংলা: আপনি কেন বিমা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হলেন? এই শিল্প নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

কাজিম উদ্দিন: বিমা একটি সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান। একমাত্র বিমা শিল্পেই কেউ পরিশ্রম করে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারে। আমি ন্যাশনাল লাইফের এন্ট্রি লেভেল থেকে কাজ শুরু করে আজ কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। বিমা শিল্প নিয়ে আমার পরিকল্পনা হচ্ছে এ শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা, জিডিপিতে বিমা শিল্পের অবদান বৃদ্ধি করা এবং সর্বোপরি দেশের জনগণকে বিমার আওতায় এনে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

আমি মনে করি, টেকসই বিমা শিল্পের স্বার্থে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় বিমা সেবা পৌঁছে দিতে হবে। পাশাপাশি প্রচলিত বিপণন পদ্ধতিতে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটাতে হবে। বাংলাদেশে বিমা খাতে যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো বেগবান হবে বলে আমি মনে করি।

এ বিভাগের আরো খবর