বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ১১% ছাড়াল, ৮ মাস ধরে বাড়ছে

  •    
  • ১ মার্চ, ২০২২ ০১:৫১

পরিকল্পনামন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি যে করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে এটা তারই প্রমাণ। মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থবছর শেষ হতে আরও পাঁচ মাস বাকি। যেভাবে বাড়ছে তাতে এই সময়ের মধ্যেই এই সূচক ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছবে বলে আমি মনে করি।’

দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বেড়েই চলেছে। করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় প্রতি মাসেই বাড়ছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক।

টানা আট মাস ধরে বাড়তে বাড়তে ২০২২ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে সূচকটি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে উঠেছে। এর অর্থ হলো, ২০২১ সালের জানুয়ারির চেয়ে এই বছরের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন।

গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

বেসরকারি খাতের ঋণ বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে পরিকল্পনামন্ত্রী শামসুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি যে করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে এটা তারই প্রমাণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণেরপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থবছর শেষ হতে আরও পাঁচ মাস বাকি আছে। যেভাবে বাড়ছে তাতে এই সময়ের মধ্যেই এই সূচক ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছবে বলে আমার মনে হচ্ছে।’

অর্থনীতির বিশ্লেষক আহসান এইচ মনসুর এটাকে অর্থনীতির জন্য খুবই ‘ভালো’ লক্ষণ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেছেন, ‘বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি দেশে বিনিয়োগ বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তার মানে ২০২২ সাল বিনিয়োগের একটি ইতিবাচক আবহ নিয়েই শুরু হয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার দেশে অভ্যন্তরীণ ঋণপ্রবাহের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ডিসেম্বরের চেয়ে শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে।

জানুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৬৬ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারি শেষে ছিল ১১ লাখ ৪০ হাজার ২৩ কোটি টাকা।

এ হিসাবেই এক বছরে ঋণ বেড়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেটে দেখা যায়, করোনা মহামারির ধাক্কায় কমতে কমতে গত বছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি একেবারে তলানিতে, ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে। এরপর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে নভেম্বরে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে।

তবে এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে রয়ে গেছে এই সূচক।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাই মাসে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি শেষে উদ্যোক্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যের চেয়ে এখনও ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ পয়েন্ট কম ঋণ নিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিনিয়োগে মন্দা চলছে। এর অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের চিত্রও ছিল হতাশাজনক। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে তা আরও কমতে থাকে।

প্রতি মাসেই কমতে কমতে গত বছরের মে মাসে তা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

অতীত ঘেটে দেখা যায়, বাংলাদেশের বর্ধিষ্ণু অর্থনীতিতে ব্যাংকের ঋণ বাড়তেই থাকে। ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ শতাংশের বেশি। বছরওয়ারি হিসেবে এর পর তা সব সময়ই ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এমনকি এক পর্যায়ে তা ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তা দুই অঙ্কের নিচে (ডাবল ডিজিট), ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমে আসে। এরপর গত দুই বছর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের নিচে (সিঙ্গেল ডিজিট) অবস্থান করে।

নভেম্বরে তা দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) ঘরে, ১০ দশমিক ১১ শতাংশে উঠে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, মহামারির ছোবলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। এরপর সরকারের প্রণোদনা ঋণে ভর করে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ হয়। আগস্টে তা আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে এবং সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে।

কিন্তু অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে তা আরও কমে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ হয়। ডিসেম্বরে সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়।

২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এপ্রিলে নেমে আসে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে। মে মাসে তা আরও কমে নেমে যায় ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে।

তবে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি খানিকটা বেড়ে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশে উঠে কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়। তারপর থেকে ঋণপ্রবাহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। জুলাই ও আগস্টে এই সূচক ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৩৮ ও ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনাকে সঙ্গে নিয়েই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। রাজস্ব আদায়েও গতি এসেছে। কয়েক মাস রেমিট্যান্স কমলেও এখন ফের গতি ফিরেছে। সবমিলিয়ে অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই এখন ইতিবাচক। গত কয়েক মাস ধরে পণ্য আমদানি যেটা বাড়ছে তার প্রভাব বিনিয়োগে পড়তে শুরু করেছে। অর্থনীতি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। উদ্যোক্তারা নতুন পরিকল্পনা সাজিয়ে বিনিয়োগ করছেন। এসব কিছুর প্রভাবই পড়েছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে।’

আগামী দিনগুলোতে এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ব্যাংকিং খাতেও চাঞ্চল্য ফিরেছে। ঋণের চাহিদা বাড়ছে। সে কারণেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি মহামারির পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

গত জানুয়ারিতে ‘বাজেট ২০২১-২২: প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন’ অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থাপন করেন। এতে তিনি এমন আশার কথা বলেন।

কোভিডের বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কারণে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে জানিয়ে ওই প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে দ্রুতই প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়ায়। রাজস্ব আয়, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতিসহ মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অবস্থান সন্তোষজনক।

‘টাকা-ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নেও ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।’

ফলে খুব শিগগির অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অর্থমন্ত্রী প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মহামারির অনিশ্চয়তামূলক পরিস্থিতির মধ্যেও কৃষি, রপ্তানিমুখী শিল্প, সিএমএসএমইর (ক্ষুদ্র–মাঝারি ও কুটির শিল্প) মতো অর্থনীতির অগ্রাধিকার খাতে ঋণ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

এছাড়া খেলাপি ঋণের মাত্রা কমিয়ে আনা, ব্যাংকিং খাতে দায়-সম্পদ ভারসাম্যহীনতা রোধ এবং কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে বিনিয়োগের গতি বজায় রাখতে কাজ চলছে।

চলতি অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছবে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এ বিভাগের আরো খবর