বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এমএসএফের উদ্বেগ

  •    
  • ১ মার্চ, ২০২২ ০০:২৬

ফেব্রুয়ারির মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সংগঠনটির প্রতিবেদনে নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা বাড়তে থাকা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যু, পুলিশি হয়রানির মতো ঘটনা বন্ধ না হওয়ার উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)।

ফেব্রুয়ারির মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সংগঠনটি প্রতিবেদন তুলে ধরেছে। সোমবার প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামালের সই করা প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

প্রতিবেদনে নারী-শিশুদের প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা বাড়তে থাকা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যু, পুলিশি হয়রানির মতো ঘটনা বন্ধ না হওয়ার উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

নির্বাচনী সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা, গণপিটুনি এবং সীমান্তে হত্যা-নির্যাতন বন্ধ হয়নি, বরং বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলো ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় গভীর ক্ষোভ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে প্রায় প্রতিটি ঘটনা হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারদের মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে এমএসএফ।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধ

প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে ফেব্রুয়ারিতে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন চারজন। বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড বেআইনি, অসাংবিধানিক এবং ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংগঠনটি।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, দমনমূলক আচরণ এবং ধর্ষণের অভিযোগও এনেছে তারা। সংগঠনটি জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে পুলিশি নির্যাতনে একজনের মৃত্যু ও পুলিশের বিরুদ্ধে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কারা হেফাজতে মৃত্যু

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারা হেফাজতে এক শিশুর আত্মহত্যা ও দুই নারীসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। কারাগারে বন্দিদের চিকিৎসায় অপর্যাপ্ততার কারণে প্রতি মাসে এত বন্দির মৃত্যু হচ্ছে। কারাগারগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে পূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করা করা উচিত।

সীমান্ত হত্যা ও অবৈধ অনুপ্রবেশ

সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধে সীমান্ত সম্মেলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করে সংগঠনটি। ফেব্রুয়ারিতেও সীমান্তে হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫ জন।

নির্বাচনি সহিংসতা

গণমাধ্যমের বরাতে সংগঠনটি জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন জেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল নিতে গিয়ে প্রকাশ্যে গোলাগুলি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ-সহিংসতা, প্রাণহানিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ দেখা গেছে। নির্বাচনি সহিংসতায় সারা দেশে অন্তত এক শিশুসহ ৯ জন নিহত এবং শতাধিক রাজনৈতিক কর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগে মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসীদের মধ্যে ভয় ও উদ্বেগ থাকার পরও আইনটি প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে মনে করে সংগঠনটি।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী- ফেব্রুয়ারিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাতটি মামলা হয়েছে। এক সাংবাদিকসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫জনকে। সাতটি মামলায় অভিযুক্ত মোট ২০জনের মধ্যে ৯ জন গণমাধ্যমকর্মী, একজন আইনজীবী, একজন যুবদল কর্মী, সাতজন যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ও দুইজন সাধারণ নাগরিক রয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া কোনো বক্তব্য বা মতামতকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে যেভাবে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, তা বন্ধের দাবি জানিয়েছে এমএসএফ।

তাদের মতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধে সরকার আইনটির কয়েকটি ধারা সংশোধনের কথা বললেও সেখানে কোনো পরিবর্তন আনেনি। উল্টো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খসড়া নীতিমালায় সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

আইনের যে ধারাগুলো হয়রানিমূলক, সেগুলো দ্রুত বাতিল করা জরুরি জানিয়ে সংগঠনটি বলেছে, নইলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অপব্যবহারের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হওয়ার সমস্যা থেকেই যাবে।

শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা

ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৫৬টি। যার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ১০৩টি।

এমএসএফের বিশ্লেষণে দেখা যায়- দল বেঁধে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩ জন, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন একজন। প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬ জন। এছাড়াও ধর্ষণ চেষ্টার শিকারের ঘটনা ঘটেছে ১৫টি, যৌন হয়রানি ১১টি ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনার ঘটেছে ৫৩টি।

ফেব্রুয়ারিতে ৬৭ জন নারী ও কিশোরী আত্মহত্যা করেছেন। অপহরণের শিকার হয়েছে ২ শিশু। অপরদিকে ৮ শিশু ও ২ কিশোরী নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়াও ফেব্রুয়ারি মাসে ৭৮ নারী ও শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যাদের ১৬ জনের মৃত্যু ছিল অস্বাভাবিক।

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকার লংঘন

সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি মাসের চিত্র উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অন্তত ৪৩ জন সাংবাদিক নানাভাবে হত্যার হুমকি, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই এক মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সময় প্রভাবশালীদের বাধায় আহত হয়েছেন ৩০ সাংবাদিক। ৯ জন সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়েছে রাজনীতিবিদ ও সন্ত্রাসীরা।

কলকারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনা

ফেব্রুয়ারিতে ৫টি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক শিশু ও এক নারী শ্রমিকসহ মোট চারজন প্রাণ হারিয়েছেন।

এমএসএফ মনে করে, কল-কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে কারখানায় অগ্নিকাণ্ড এবং হতাহতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। কলকারখানা স্থাপনে নিয়ম-কানুন আর বিধি-বিধান থাকলেও মালিকপক্ষ সেটি অমান্য করেছে। তাই এক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস বা গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত হচ্ছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব দুর্ঘটনায় হতাহতের কোনো পরিসংখ্যান নেই।

এমএসএফ মনে করে, ‘গ্যাসের এসব বিস্ফোরণ নিছক দুর্ঘটনা নয়। এসব দুর্ঘটনার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবে এড়াতে পারে না।’

সড়ক দুর্ঘটনা

সড়ক দুর্ঘটনাকে ‘গুরুতর জাতীয় সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এমএসএফ। তাদের পরিসংখ্যানে ফেব্রুয়ারিতে ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সারাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, যার সঠিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া দুস্কর। যানবাহনের অতিমাত্রার গতি এবং চালক ও পথচারীদের মধ্যে সড়কের সাইন মার্কিং, জেব্রা ক্রসিং না মানার প্রবণতার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।’

প্রধান সড়কের ওপর হাটবাজার গড়ে তোলার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে বলেও মনে করে সংগঠনটি।

গণপিটুনি

এমএসএফ বলছে, ফেব্রুয়ারিতে অন্তত ৬টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ২ যুবকের মৃত্যু ছাড়াও একজন পুলিশ সদস্য, দুই নারী ও তিন যুবক আহত হয়েছেন। প্রচলিত আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনির ঘটনাগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

এ বিভাগের আরো খবর