২০১১ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বিতরণ করা ঋণের ৬ শতাংশ ছিল জানিয়ে রাজধানীতে এক আলোচনায় জানানো হয়েছে, সেটি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গ্রাহকদের ঢালাও বিভিন্ন নীতি সুবিধার কারণে খেলাপি ঋণের লাগাম টানা যাচ্ছে না বলেও আলোচকদের মন্তব্যে উঠে এসেছে।
বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায় সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শিথিলতা আনার কারণে ইচ্ছাকৃত খেলাপির সংখ্যা বাড়ছে। খেলাপি ঋণের মতো জাতীয় সমস্যার সমাধানে বারবার সুবিধা দেয়া টেকসই কোনো বিকল্প না।
সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ‘ব্যাংকিংয়ে নৈতিকতা’ শীর্ষক ২০তম নুরুল মতিন স্মারক বক্তৃতায় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম-এর মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিআইবিএম-এর সহযোগী অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) আশরাফ আল মামুন।
মূল প্রবন্ধে সাদিক আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক বা অন্য কোনো চাপের ব্যাংক খাতে শিথিলতা আনা ঠিক হবে না। ব্যাংকিং খাতের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে নীতিমালা প্রণয়ন ও তদারকি করতে হবে।’
তিনিও বলেন, ‘ব্যাংকিং নৈতিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ব্যাংকিং সুশাসন। ১৯৯৮ সালে ব্যাংকিং সংস্কার কর্মসূচির আগে এ খাত খুব দুর্বল ছিল। ১৯৯৭ সালের শেষের দিকেও অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অদক্ষ সরকারি ব্যাংকগুলোর আধিপত্য ছিল। তখন মোট আমানতের ৬৭ শতাংশ এবং মোট ঋণের ৬৩ শতাংশ ছিলো তাদের নিয়ন্ত্রণে। দুর্বল শৃঙ্খলা ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে এসব ব্যাংকের অনেক ঋণই খেলাপি হয়েছে।’
ব্যাংকিং নৈতিকতা এখন আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয় মূল প্রবন্ধে। বলা হয়, ‘১৯৯৮ সাল পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারগুলো মূলত ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ও নৈতিকতার অনেকাংশ পুনরুদ্ধার করেছিল। এ সময়ে ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন আইন কানুন, নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিকক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ, সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় সংস্কার এবং বিচক্ষণ নীতিমালা ফলে সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘ব্যাংকিংয়ে নৈতিকতার চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ভূমিকা পুরো ব্যাংকের পারফরমেন্সের উপর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
তিনি বলেন, ‘করোনার দোহায় দিয়ে অনেক ব্যাংক তাদের কর্মী ছাঁটাই করেছে। কোনো কারণ ছাড়া ছাঁটাই করা কর্মীদের দ্রুততম সময়ে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর।’
বিআইবিএম-এর মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিআইবিএম প্রতিবছর এএফ এম নুরুল মতিন স্মরণে মর্যাদাপূর্ণ স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। এ বছর ২০তম স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত প্রত্যেক বছর নৈতিকতার বিষয়ে নতুন বার্তা পেয়ে থাকে।’
ব্যাংকিং খাতের উন্নতির নীতি নির্ধারণী বিষয়ে এএফএম নুরুল মতিনের অবদান ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন অর্ডার ১৯৭২ প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তার জন্ম ১৯২৮ সালে। তিনি ১৯৫১ সালে তদানীন্তন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের গবেষণা বিভাগে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।
দীর্ঘ ব্যাংকিং জীবনে তিনি স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নির্বাহী পরিচালক, ইক্যুইটি পার্টিসিপেশন ফান্ডে নির্বাহী পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হন। তিনি বিআইবিএমের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও পরিচালক ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তিনি মারা যান।
ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা শীর্ষক এ মেমোরিয়াল লেকচার ১৯৯৮ সাল থেকে চালু করেছে বিআইবিএম।