ফরিদপুরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে জোর করে পারিবারিক সম্পত্তি দখলের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারই আপন ভাই-বোন।
ফরিদপুর প্রেস ক্লাবে রোববার বেলা ১১টার দিকে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
এতে উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত খলিলুর রহমানের ছোট ভাই আব্দুস সত্তার মল্লিক, আলমগীর মল্লিক, আব্দুল জলিল মল্লিক, বোন মমতাজ বেগম, হাফিজা বেগম এবং পরী বেগম।
তাদের বাড়ি ফরিদপুর সদরের চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের দেলোন মল্লিকের ডাঙ্গীতে।
তাদের অভিযোগ, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর ওয়ারিশদের সম্পত্তি বুঝিয়ে না দিয়ে সব দলিল আটকে রেখে সম্পত্তি এককভাবে ভোগ দখল করে আসছেন। সম্পত্তির হিসেব চাইতে গেলে খলিলুর তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেন।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খলিলুর রহমান। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে দাবি করে এ বিষয়ে তিনি প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন।
তবে তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগের কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুস সাত্তার মল্লিক বলেন, ‘আমাদের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর যাবতীয় দলিলপত্র বড় ভাই খলিলুর রহমান মাস্টার আটকে রেখেছেন। এমনকি আমাদের কোনো ভাই-বোনকে ন্যায্য ভাগ দেননি। তিনি এককভাবে ভোগ দখল করেন।’
‘তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা, এ কারণে আমাদের প্রাপ্য বসতবাড়ি-দোকান ঘরসহ অন্যান্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছেন। জমির প্রাপ্য হিসেব চাইতে গেলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেন। এ বিষয়ে কোতয়ালী থানায় মামলাও করেছি, যা বর্তমানে চলমান।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে কয়েকবার সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন প্রতিনিধিরা বিচার করলে তিনি (খলিলুর) প্রথমে তা মেনে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি অস্বীকার করেন।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছি। এতদিন তারা কোনো অভিযোগ করল না কেন? এখন আমি অবসরে এসে গ্রামের সম্পত্তি বুঝে নিতে আসাতেই বিপত্তি বাঁধল।
‘আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি প্রায় ১৫০ বিঘা। আমি শুধু আমার ভাগের অংশটুকু দখলে আছি। তাদের ভাগের জমি তাদেরই আছে।’
এ বিষয়ে প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নিবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার চরিত্র হননে যদি তারা কোনো কাজ করে, আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মির্জা সাইফুল ইসলাম আজম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাদের পারিবারিক জমির বিরোধ নিয়ে ২৫ জানুয়ারি একটি সালিশ হয়েছে। জমিজমা জরিপ করে দেখা যায়, খলিলুর রহমান কিছু বেশি জমি ভোগদখলে আছেন।
‘সেই জমিতে মুক্তিযোদ্ধার বসতঘর থাকায় সালিশে তার সমপরিমাণ মূল্য দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে তিনি কোনো যোগাযোগ করেনেনি।’
কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিসুর রহমান বলেন, ‘খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আদালত যে রায় দিবে সেটাই হবে।’
পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় সম্পত্তি দখলের অভিযোগ দিয়েছিলেন খলিলুরও। এ বিষয়ে তদন্ত করে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন উপ পরিদর্শক।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তাদের পরিবারের কোনো সদস্য কখনোই আমাদের কাছে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে আসেনি।’