জাতীয় পার্টি নতুন নির্বাচন কমিশনকে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত আমলানির্ভর’ বলে মূল্যায়ন করলেও দলটির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন। তিনি বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন করায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের দিন সোমবার বিরোধীদলীয় নেতার বরাত দিয়ে তার সহকারী একান্ত সচিব মামুন হাসান এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশাবাদ জানিয়েছেন রওশন।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদপত্নী এই মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। তিনি এখন কথাও বলতে পারছেন। তবে এই বিবৃতি লিখে পাঠানো হয়েছে বলে জানান মামুন হাসান।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১২ দিন পর রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নাম জানানো হয়।
এই কমিশনের প্রধান হয়েছেন সাবেক সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। অন্য সদস্যরা হলেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান।
এদের মধ্যে সার্চ কমিটির কাছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নাম প্রস্তাব করেছিলেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং তিনটি ছোট দল। বাকিদের নাম কারা প্রস্তাব করেছিলেন সেটি জানা যায়নি। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেটি প্রকাশ পায়নি এখনও।
রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন বেছে নেয়ার পরদিন জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক মূল্যায়নের কথা বলেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়া হলো, যে নির্বাচন কমিশন করা হয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগ সমর্থিত একটি আমলানির্ভর নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করতে পারবে কি না, আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
‘এই নির্বাচন কমিশনের আগামীর কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করবে যে তারা নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে করতে পারছে কি না। তখনই বোঝা যাবে এই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা কতটুকু।’
তবে রওশনের পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সব দলের সাথে আলোচনা করে, তাদের মতামতের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠন করে, যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সংবিধান অনুযায়ী ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার আইন, ২০২২’ প্রণয়ন করে এবং আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করায় রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।”
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেশ ও জাতিকে উপহার দেবে- এটাই সবার প্রত্যাশা। নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন এবং দেশের মানুষ নিশ্চিতভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই তাদের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটাতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।’
আরও পড়ুন: নতুন ইসি আ.লীগ সমর্থিত আমলানির্ভর: জাপা
প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য চার কমিশনারকে উদ্দেশ করে রওশন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতেই আপনারা দায়িত্ব পেয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী সেই দায়িত্বটুকু পালন করতে যথেষ্ট যত্নশীল হলেই সম্ভব হবে সব দলের অংশগ্রহণে আগামীতে দেশে, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা।’
গত ৫ নভেম্বর রওশন এরশাদকে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিনই তার মৃত্যু হয়েছে, এমন গুজব ছড়ালেও রাত ৯টায় তিনি ব্যাংককে পৌঁছানোর পর গুজবের অবসান হয়।
দেশে থাকতে ১৪ আগস্ট রওশন এরশাদের ফুসফুসে জটিলতা দেখা দেয়। পরে তার অক্সিজেন লেভেল কমতে শুরু করলে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। তখন বেশ কিছুদিন তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। পরে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে কেবিনে নেয়া হয়। হাসপাতালে থাকার সময়ই ২০ অক্টোবর আবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্বিতীয় দফায় আইসিইউতে নেয়া হয়।