নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে ভালো মানুষ উল্লেখ করে তাকে সহযোগিতা করতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপিকে যে পরামর্শ দিয়েছেন, তা ধর্তব্যে নিচ্ছে না দলটি।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় উল্টো জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এই মূল্যায়ন নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। বলেছেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতার কথায় তারা কেন ট্রাকের নিচে মাথা দেবেন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৩ দিন পর শপথ নিয়েছে নতুন কমিশন। নতুন কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল, যাকে সিইসি করতে প্রস্তাব করেছিলেন গত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
হাবিবুল আউয়াল সিইসির দায়িত্ব পেয়েছেন শুনে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতার প্রতিক্রিয়া ছিল এমন: ‘খাঁটি মানুষ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। সরকার সহযোগিতা করলে তার দ্বারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট উপহার দেয়া সম্ভব।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাম ঘরানার লোক। তিনি চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত। তবে গত এক দশকে বিএনপির কাছাকাছি এসেছেন তিনি। নানা সময় দলটির প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে খোলা চিঠি লিখে নানা বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়েছেন। সাক্ষাৎ করেও নিজের কথা বলে এসেছেন।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন, জেএসডি নেতা আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতা আবদুল কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে নেপথ্যের ভূমিকাও পালন করেন তিনি।
ভোটের পরও জাফরুল্লাহ-বিএনপির সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিল। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে আপাতত দূরে সরে পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়ার পরামর্শের পর সম্পর্কে ফাটল ধরে। একপর্যায়ে জাফরুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেয় বিএনপি।
এই অবস্থায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে জাফরুল্লাহর উচ্ছ্বাস নিয়ে বিএনপিতে আছে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেব ওনাকে (নতুন সিইসি) ভালো মানুষ জানেন। এ ব্যাপারে উনি মন্তব্য করতে পারেন, সে কারণে বিশ্বাস করে ট্রাকের নিচে আমাদের মাথা দিতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।’
বিএনপির প্রধান দাবি এখন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার। নির্বাচন কমিশন সেই সরকার গঠন করবে- এমন একটি কথা বলে আসছেন নেতারা।
গয়েশ্বর বলেন, ‘আমরা তো ওনাকে (সিইসি) মেনে নেব কি নেব না, সেটা পরের বিষয়। আগে নির্বাচনকালীন সরকারটা ডিসাইড হোক। তারপরে নির্বাচন কমিশন কী করবে সেটা তো পরের কথা।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভাষায় নতুন সিইসি ভালো, দক্ষ ও শক্ত মেরুদণ্ডের লোক হলেই তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন- এটা মনে করেন না গয়েশ্বর। তিনি বলেন, ‘হাজি মানুষ হলেই সৎলোক হবে এমন কোনো গ্যারান্টি আছে নাকি? সব হাজি যদি সৎলোক হয় তাহলে অনেকের বিরুদ্ধেই তো আপনারা অপকর্মের নিউজ লেখেন। এটা করেন কেন?
‘উনি (সিইসি) নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি পারবেন না, এমন সংশয়ও তো আমাদের আছে। আমরা তো এই কথাও বলছি, মির্জা ফখরুল, মোশাররফ হোসেন ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কেও নির্বাচন কমিশনের প্রধান বানালেও এই সরকারকে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
‘একটা নির্বাচন সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া কখনও সম্ভব নয়, সোজা কথা। নির্বাচন কমিশনের হয়তো শতভাগ ইচ্ছা থাকবে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন উনি একভাগও করতে পারবেন না। কারণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আর যে নির্বাচনের ফলাফলে সরকারের লাভবান কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেখানে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।’