সোয়া তিন বছর আগের জাতীয় নির্বাচনে জোটের শরিক। তবে এখন সম্পর্ক খুব একটা ভালো, এমন নয়।
এর মধ্যে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সিইসি নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও বিএনপির মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে।
নতুন দায়িত্ব নিতে যাওয়া সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে এই পদের জন্য সুপারিশ করেছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার বিবেচনায় ‘নতুন সিইসি খাঁটি লোক’।
তবে বিএনপি তার এই কথায় ভরসা করছে না। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘জাফরুল্লাহর কথায় বিএনপি কেন ট্রাকের নিচে মাথা দিতে যাবে।’
বিএনপি মনে করে, সরকারের পছন্দের মানুষ দায়িত্ব পেয়েছে। তারা নির্বাচন কমিশন নিয়ে ভাবছে না। তাদের ভাবনায় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার।
তবে জাফরুল্লাহ চৌধুরী আবার এমন কথায় ক্ষেপেছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেছেন, বিএনপির হোমওয়ার্ক ভালো নয় বলে তারা এমন কথা বলেছে।
নিউজবাংলাকে দেয়া গয়েশ্বরের বক্তব্যের জবাব জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রথমে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য নেই।’
পরে তিনি বলেন, ‘তারা এমন বলেছে, সেটার কারণ, তারা এনাফ হোমওয়ার্ক করেনি। তবে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন তো বিএনপির তার (সিইসি) মাধ্যমে করার চিন্তা করা উচিত না। ওনার দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু ভোট পরিচালনা করা। বিএনপির দায়িত্ব হবে দলীয় সরকার পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করা।
‘ওনাকে (সিইসি) সমর্থন দেয়া সবার দরকার, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়। এটা বিএনপি নতুন সিইসির কাছে পাবে, এটা আমি বলতে পারি।’
নতুন সিইসিকে নিয়ে বিএনপির কারও সঙ্গে কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কথা হয়নি। নাম দেয়ার আগে হয়নি, এখনও হয়নি। আমি পাবলিকলি ও আপনাদের মাধ্যমে বলেছি। তবে বিএনপি যদি চায় আমি আলাপ করতেও রাজি আছি।’
সিইসিকে কেন খাঁটি লোক বলছেন জাফরুল্লাহ
এই প্রশ্নে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ওনাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। উনি সাহসী, বিবেকবান মানুষ, মেরুদণ্ড শক্ত আছে।
‘ওনার বাবা ছিলেন আইজিপি প্রিজনস। উনি কয়েদিদের পয়সা খাইতেন না, হাসপাতাল থেকে পয়সা নিতেন না। উনি ওনার পিতার এ বিষয়টি (গুণ) কিছু পেয়েছেন। ওনার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই, কিছু নেই। এসব কারণে আমার মনে হয়েছে এই ব্যক্তিকে দিলে লোকের আস্থা ফেরত আসতে পারে।’
কারও পরামর্শে হাবিবুল আউয়ালের নাম প্রস্তাব করেছেন কি না- এমন প্রশ্নে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘না, আমি আমার নিজের বিবেকের পরামর্শ নিয়েছি। আমি যতগুলো নাম দিয়েছি, কারও সঙ্গে পরামর্শ করিনি। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলিনি। সেটা বিএনপি হোক কিংবা বাম। আমি যেটাকে ভালো মনে করেছি, সেটাই করেছি।’
তবে সুষ্ঠু ভোট করার জন্য সিইসির এই মেরুদণ্ড শক্ত থাকাই একমাত্র শর্ত নয় বলে মনে করেন জাফরুল্লাহ। বলেন, ‘সরকার ভালো কাজ করেছে তাকে সিইসি করে। কিন্তু সরকারকে ঘোষণা দিতে হবে যে সরকার তার কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।’
গত জাতীয় নির্বাচনের আগে গণফোরাম নেতা কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে ভূমিকা রাখা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে দলটির সম্পর্ক অবশ্য এখন খুব একটা ভালো নয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে আপাতত দূরে সরে পড়াশোনায় মনোযোগের পরামর্শ দেয়ার পর সম্পর্কে ফাটল ধরে। একপর্যায়ে জাফরুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয় বিএনপি।
সে সময় বিএনপি নেতাদের নানা বক্তব্য-বিবৃতিতে বিরক্ত হয়ে একপর্যায়ে জাফরুল্লাহ বলেছিলেন, ‘বিএনপি নেতারা গোঁয়ার।’